রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ কেজি ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ বাবা ও ছেলেকে আটক করেছে র্যাব। জব্দকৃত হেরোইনের বর্তমান বাজার মূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে র্যাব-৫ এর একটি দল গোদাগাড়ী উপজেলার দুর্গম চর হনুমন্তনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
আটকৃরা হলেন— হনুমন্তনগরের কাজিম উদ্দিন ওরফে তৈয়ব (৪৪) ও তার ছেলে জীবন আলী (১৭)। আটক কাজিম উদ্দিন ওই এলাকার হেরোইন সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার ছেলে জীবন আলী হেরোইন কেনা বেচার হিসাব সংরক্ষণ করতো বলে জানিয়েছে র্যাব।
হেরোইন উদ্ধার ও মাদক কারবারি আটকের বিশেষ অভিযানের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-৫ এর সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি জানান, গোদাগাড়ীর ওই চরাঞ্চলটি ব্যবসায়ীরা হেরোইন পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করেন। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব সেখানে বিশেষ নজরদারি করছে। আটকরা বাইরে পাচারের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ এই হেরোইন অভিনব কায়দায় বাড়িতে সংরক্ষণ করছিলেন। এর আগে একাধিক চালান পাচার করেছেন তারা।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক জানান, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও এর সংলগ্ন পদ্মার ওপাড়ে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলগুলো হেরোইন পাচারের একটি বড় রুট হিসেব ব্যবহৃত হয়। এ কারণে র্যাব-৫ এর গোয়েন্দা দল এই এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৫ এর গোয়েন্দা দল জানতে পারে হেরোইনের একটি বড় চালান পাচার করবে কাজিম উদ্দিন তৈয়ব। সীমান্তের ওপাড় থেকে বিপুল পরিমাণ হেরোইন পাচারের উদ্দেশ্যে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছেন তিনি। এই তথ্য পাওয়ার পর র্যাব-৫ এর সদস্যরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা নৌকাযোগে পদ্মা নদী পার হয়ে চর হনুমন্তনগরে পৌঁছায়।
প্রায় এক ঘণ্টা পায়ে হেঁটে কাজিম উদ্দিন তৈয়বের বাড়ির এলাকায় পৌঁছানোর পর তার বাড়িটি শনাক্ত করা হয়। এরপর কাজিম ও তার ছেলে জীবন আলীকে আটক করেন র্যাব সদস্যরা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়িতে একাধিক জায়গায় লুকানো অবস্থায় পাঁচ কেজি ২০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক আরও জানান, বাড়ি তল্লাশির সময় একটি ছোট ডায়েরি পাওয়া যায়, যার ভেতরে তার মাদক কারবারের বিভিন্ন চালান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত কিছু তথ্য লিখিত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছেন, কাজিম উদ্দিন তৈয়ব এবং তার ছেলে জীবন আলী সংঘবদ্ধ মাদক চক্রের সাথে জড়িত। কাজিম উদ্দিন তৈয়বের মাদকের চালান সংগ্রহ করার বাইরেও মাদক সংক্রান্ত সকল ধরনের হিসাব-নিকাশ অর্থাৎ একাউন্ট্যান্টের কাজ করতেন তার ছেলে জীবন আলী।
চক্রটির সদস্যরা এলাকায় বিভিন্ন পেশার ছদ্মবেশে সীমান্তের ওপাড় থেকে বিপুল পরিমাণ হেরোইন চোরাচালান করে আসছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তারা একই কৌশলে বিপুল পরিমাণ মাদক সরবরাহ করেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের নামে মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
এসএস/এমজেএফ