ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রেলওয়ের জমি ডিসিআরের নামে জবরদখল, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
রেলওয়ের জমি ডিসিআরের নামে জবরদখল, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী

যশোর: রেললাইনের জমি বরাদ্দ নেওয়ার নামে প্রাচীর দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সৈয়দপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী কওছার মোল্লার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন গ্রামবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গ্রামের কওছার মোল্লা ও তার স্ত্রী সালমা খাতুন অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন মহলকে তুষ্ট করে রেললাইনের পাশের জমি গোপনে ডিসিআর কেটে মালিকানা দাবি করছেন। আশপাশে বসবাসরত মানুষের রাস্তা দখল করে প্রাচীর দিয়েছেন। এতে গোটা গ্রামের মানুষ ওই দম্পত্তির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে কওছার মোল্লা বলেন, ক্রয় সূত্রে জমির মালিক আমি। দীর্ঘ ১০ বছর কোর্টে মামলা চালিয়ে পক্ষে রায় পেয়েছি। পরে জমি ক্রয় করি। এরপর বাদী পক্ষ আবারও আপিল করেছে। সেই আপিলের রায়ও আমার পক্ষে আসে। আর রেলের জমিটা ডিসিআর কাটা। রেলওয়ের জমি কৃষি ও বাণিজ্যিক শ্রেণিতে ডিসিআর হয়। আমার ডিসিআর নেওয়া জমিটি বাণিজ্যিক শ্রেণির, ফলে আমি অবকাঠামো করতে পারি। আর আমি অবৈধ কিছু করলে রেল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

বসতবাড়ির রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে একটি পরিবার আছে। তারা আমার প্রাচীরের গেট দিয়ে যাতায়াত করছে।

কওছার মোল্লার স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন, কোর্টের রায় পাওয়ার পরে জমিটি ক্রয় করা। এরপর দেখি আমার জমির সামনের অংশে রেলওয়ের সরকারি জমি। এজন্য সামনের সরকারি জমিটি ডিসিআর কেটে নিয়েছি।

নিজের বিরদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে সালমা খাতুন বলেন, এগুলো সব বানোয়াট, মিথ্যা কথা।

কওছার মোল্লার প্রাচীর ঘেরা জমির মধ্যে প্রবেশ করে দেখা যায়, ডিসিআর কাটা অংশে তিনি বসতবাড়ির ঘর আকৃতির দালান নির্মাণের কাজ চালাচ্ছেন। এছাড়াও তার প্রাচীর ঘেরা অংশে খোরশেদ আলী গাজী এবং জমসেদ আলী গাজীর বসতবাড়ি রয়েছে। এ দুটি পরিবারের প্রায় ১২ জন সদস্যের বর্তমানে চলাচলের পথই নেই। শুধু তাই নয়, কওছার মোল্লা প্রচীর ঘিরে জমি দখলের জন্য সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের গাছ কেটে ফাঁকা করেছেন। প্রাচীর দেওয়ার সময় বাধা দিলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছেন।

ভুক্তভোগী খোরশেদ আলী গাজী বলেন, ‘আমার ৯৮ দাগে ৮৮ শতক জমি রয়েছে। আমার জমির সামনে দিয়ে যশোর-বেনাপোলের রেললাইন। ওই জমির ৩০ শতক খাস জমি কওছার মোল্লা এবং তার স্ত্রী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ডিসিআর কেটে নিয়েছেন। এরপর তারা জবর দখল করে প্রাচীর তুলে আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এখান অনান্য অসহায় বাসিন্দাদের সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করে দখল করার চেষ্টা করছে এই দম্পতি। ’

জমসেদ আলী নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার মালিকানার জমি পাঁচ শতক। কওছার মোল্লা জমি ডিসিআর কেটে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে এখন আমার পাঁচ শতক জমিও অবৈধভাবে দখল করেছেন। ফলে নিজের জমিতে চালচলের পথও বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। ’

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ভিটেমাটি নেই সেজন্য আমরা সরকারি জায়গায় থাকি। সেখানে যদি ডিসিআর কাটার নামে প্রভাবশালী কেউ জমি দখল করে বা আমাদের উচ্ছেদ করে দেয় তাহলে আমরা কোথায় যাব?

তারা বলেন, কওছার মোল্লা এবং তার স্ত্রী আশপাশের আরও বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ডিসিআর কেটে দখল করার চেষ্টা করছিলেন। গ্রামে কয়েকজন বাধা দেওয়ায় তারা তাদের উচ্ছেদ করতে পারেননি।

গ্রামবাসী অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘আমরা ভুক্তভোগীরা গরিব মানুষ। কওছার মোল্লার টাকা আছে তাই তিনি গুন্ডাপান্ডা দিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। এর একটা সুরহা না হলে আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। ’

জসিম শেখ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের যার যার বাড়ির সামনে রেলওয়ের জায়গার ডিসিআর কেটে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার করে টাকা নিয়েছেন কওছার মোল্লা। এরপর আমাদের ডিসিআর কেটে না দিয়ে তিনি নিজের নামে ডিসিআর কেটে নিয়েছেন। এখন আমাদের উচ্ছেদের জন্য পাঁয়তারা করছেন। ’

এদিকে ঘটনাস্থলেই কওছার মোল্লার কাছে জমির ডিসিআর কাটা কপি দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

এ বিষয়ে যশোর রেলওয়ের ১নং কাচারির সার্ভেয়ার আব্দুল মতিনের বক্তব্য আনতে গিয়ে দেখা যায়, কওছার মোল্লা এবং সালমা খাতুন সেখানে ডিসিআর নবায়নের জন্য উপস্থিত হয়েছেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল মতিন বলেন, রেলওয়ের জমি কওছার মোল্লাকে লিজ দেওয়া হয়েছে। পাকশি থেকে তারা ২০২০ সালে লিজ নেয়। ২০৩০ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি জমা দিতে আজ (১৪ জানুয়ারি) আমার কাছে এসেছেন। কওছার মোল্লা ডিসিআর নিয়েছেন, সেখানে তিনি কৃষি সংশ্লিষ্ট স্থাপনা করতে পারেন। আমি সেখানে নিয়মিত যাই এবং খোঁজখবর নিয়ে থাকি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
ইউজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।