ঢাকা: রাজধানীর ওয়ারীতে অগ্নিঝুঁকি থাকা ও ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬ জন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এসব রেস্টুরেন্ট থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জন মারা গেছেন। ভয়াবহ এই আগুনের ঘটনার পর বিভিন্ন সংস্থার টনক নড়েছে, একাধিক সংস্থা অভিযানেও নেমেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ওয়ারীতে অভিযান চালায় পুলিশ।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর র্যাংকিং স্ট্রিটের রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইকবাল হোসাইন।
সরজমিনে ওয়ারীতে গিয়ে দেখা যায়, রেস্টুরেন্টগুলোতে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অল্প কিছু জায়গায় তৈরি কিচেন দিয়েই রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন মালিকরা। চার ফুট বাই ছয় ফুট সাইজের কিচেনের ৭-৮ জন শেফ কাজ করলেও তেমন কোনো সেফটি নেই তাদের জন্য। রেস্টুরেন্টেগুলোতে বা ভবনে আলাদা কোনো এক্সিট দরজা নেই।
‘আই লাভ মেজ্জান’ রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, আগেই সবকিছু সরিয়ে রেখেছেন সেখানকার কর্মীরা। তাই কয়েকটি হাঁড়িপাতিল ছাড়া আর কিছু দেখা যায়নি। তবে ওই ভবনের এক্সিট গেটে প্রতিবন্ধকতা থাকায় ভবন কর্তৃপক্ষকে দ্বায়ী করা হয়েছে।
‘বার্গার এক্সপ্রেস’ রেস্টুরেন্টে দেখা যায়, চার ফুট বাই ছয় ফুট সাইজের কিচেনের ৭-৮ জন শেফ কাজ করছেন। সেখানে ছোট একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে। তবে সেটি দেখে মেয়াদোত্তীর্ণ মনে হয়েছে। কিচেনে যাওয়ার পথে ছিল প্রতিবন্ধকতা।
‘শেফ টায়েফ’ রেস্টুরেন্টের এক্সিট পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে রিয়েলমি নামে একটি মোবাইল কোম্পানির শোরুম। ভবনটির সিঁড়িও অনেক সরু।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ওয়ারী একটি আবাসিক এলাকা, তবে কিছু দিনের মধ্যে এটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়ে গেছে। এখন প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় দোকানপাট তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই কারণে এই এলাকায় এখন সব সময় যানজট লেগে থাকে। বাড়িওয়ালারা অতি মুনাফার লোভে ওয়ারী এলাকাটিকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করেছেন।
অভিযান শেষে ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ইকবাল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গতকাল থেকে অভিধানে নেমেছি। বিশেষ করে আমাদের ওয়ারী থানার অধীনে র্যাংকিং স্ট্রিট অনেক ব্যস্ততম একটি জায়গা। এই একটি রাস্তায় পঞ্চাশের অধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টগুলো আমরা ভিজিট করেছি। ভিজিট করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি তা হলো— বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টই আবাসিক ভবনের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তারা এই রান্নার কাজগুলো চালাচ্ছে। আমরা ভিজিট করে দেখেছি, রেস্টুরেন্টের কাস্টমার সেফটি কোড, কিচেন কোড কোনো কিছুই তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। কিচেন ৪ ফুট বাই ৬ ফুট জায়গার মধ্যে করা হয়েছে। এমন জায়গার মধ্যে সাত থেকে আট জন শেফ রান্না করছেন। কিচেন থেকে বের হওয়ার দরজার সামনে চালের বস্তা, আটার বস্তা রাখা হয়েছে। একই পাশে বিভিন্ন সিলিন্ডার, জেনারেটর এসব রেখেছে। চরম অনিরাপদ অবস্থায় তারা রেস্টুরেন্টগুলো পরিচালনা করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মিনিমাম সেফটি যারা মেইনটেইন করতে পারেনি, এমন রেস্টুরেন্ট থেকে মোট ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ আগুনে ইতোমধ্যে ৪৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৪৪ জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। সিআইডি এই দুইজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৪
এসজেএ/এমজেএফ