ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নানা অভিযোগ ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে 

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২৪
নানা অভিযোগ ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে  ডা. রায়হান শরীফ

সিরাজগঞ্জ: শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, অস্ত্র নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এবং তাকে বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কলেজ প্রশাসন।

 

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে পিস্তল নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে পিস্তল বের করে গুলি করেন। এতে আরাফাত আমিন তমাল নামে এক শিক্ষার্থীর পায়ে গুলি লাগে। লাবিবা নামে অপর এক শিক্ষার্থীর মাথার পাশ দিয়ে গুলি চলে যায়।

ঘটনার পর ওই শিক্ষককে আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এবং শহরের দত্তবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তিনি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।  

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ উগ্র মস্তিষ্কের মানুষ। সোমবার বিকেলে তিনি শ্রেণিকক্ষে এসে শিক্ষার্থীদের ভাইভা নিচ্ছিলেন। এ সময় আমার একটি পোষা পাখি আছে- এ কথা বলেই তার ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করেন। পিস্তল দেখিয়ে বলেন, এটাই আমার “পোষা পাখি। ” পিস্তলটি নড়াচড়া করতেই গুলি বের হয়ে তমালের পায়ে লাগে। আরেক শিক্ষার্থী লাবিবার কানের পাশ দিয়ে যায়।

কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া ও লাবিবা বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ ছাত্রীদেরও উত্ত্যক্ত করতেন। আপত্তিকর ইশারা করতেন। ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন। কলেজ ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেন তিনি। এসব বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  

ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তার সহকর্মী শিক্ষকরাও। কলেজের ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হিল কাফিসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, “শিক্ষক রায়হান শরীফ এর আগেও কলেজে পিস্তল নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর তাকে সতর্ক করায় তিনি উল্টো ভয় দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও হোস্টেলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদক অফার করারও অভিযোগ রয়েছে। তাকে বেশ কয়েকবার বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কলেজ অধ্যক্ষ। ডিজি অফিসকে ম্যানেজ করে তিনি স্বপদে বহাল থাকেন।  

রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরীও। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক এক ধরনের সাইকো। তার মেজাজ সবসময় চড়া থাকে। মাঝে মধ্যেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার খারাপ আচরণের অভিযোগ পাওয়া যায়। একাধিকবার তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঢুকেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। তাকে বদলির জন্য কয়েক দফায় চেষ্টা করেছি। অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও বদলি করাতে পারিনি।  

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি কীভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঢুকলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রায়হান শরীফের কাছ থেকে ৭.৫ বোরের একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। পিস্তলটির কোনো লাইসেন্স নেই। রায়হান শরীফকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।  

পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রের পায়ে গুলি করেন শিক্ষক। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নামে মামলা হয়েছে।  

** ছাত্রকে গুলি করা সেই শিক্ষকের নামে মামলা
** মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ছাত্রকে গুলি করলেন শিক্ষক

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।