ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাতির মহানায়কের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
জাতির মহানায়কের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

ঢাকা: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৭ মার্চ। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

বঙ্গবন্ধুকে তার বাবা-মা ‘খোকা’ বলে ডাকতেন। ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার নিভৃত গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় খোকার জন্ম হয়। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা শেখ সায়েরা খাতুন। তাদের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।

মহানায়কের জন্মদিনে দেশে জাতীয় শিশু দিবসও পালিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতেই এই মহা দিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।

বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পেরিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতিই শুধু নন, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎসও হয়ে ওঠেন।

প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে স্বাধীনতার জন্য উত্তাল ভারতের অগ্নিগর্ভে জন্ম নেন শেখ মুজিব। শৈশব থেকেই জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন দেখেছেন। নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। ব্রিটিশ-শোষণ থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ মুক্ত হলেও বাঙালির ওপর জেঁকে বসে পাকিস্তানি-শোষণ-নির্যাতন। ধর্মীয় দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র শুরু থেকেই বাঙালির ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তখন থেকেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে বাঙালি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক আন্দোলনের পথ পেরিয়ে শেখ মুজিব বাঙালিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। যার বহি:প্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়াতে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাক, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। বঙ্গবন্ধুর এই চূড়ান্ত নির্দেশই জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যোগায়। এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্বস্তরের মানুষ অস্ত্র নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। শেখ মুজিবের নির্দেশেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে।

বঙ্গবন্ধু তার সাত বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ওই কলেজের বেকার হোস্টেলে আবাসন নেন। ১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিএ পাস করেন। তিনি ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই সময়ে তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাবিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশ নেন শেখ মুজিব। পাকিস্তানের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করার আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকেন। বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নেমে আসে জেল-জুলুম নির্যাতন। রাজনৈতিক জীবনে এক যুগেরও অধিককাল তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।

দুইবার তিনি ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ১৮ বার কারাবরণ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি শাসক চক্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সব আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছেন।

১৯৫২, ’৫৪, ’৬২, ’৬৬ এর আন্দোলন আর ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০-এর নির্বাচনে বিজয় সবই জাতির সংগ্রামী ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন স্বদেশে ফিরে আসেন। জাতি পিতা সদ্য স্বাধীন দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতাবিরোধী, দেশি-বিদেশি চক্র তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে।

কর্মসূচি : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

এদিকে সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একইসঙ্গে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন তারা।

এদিকে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।

এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ১৮ মার্চ সকাল তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।