ঢাকা: চারদিকে পোড়াস্তূপ। সবাই ব্যস্ত কিছু অক্ষত আছে কিনা সেটি খুঁজে দেখায়।
রোববার (২৪ মার্চ) রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর আগুনে পুড়ে যাওয়া কড়াইল বস্তিতে এভাবেই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে দেখা যায় শাহীনকে। পেশায় দিনমজুর শাহীন স্ত্রী মৌসুমী ও তিন বছরের কন্যা সন্তান আনিকাকে নিয়ে থাকতেন এই বস্তিতে। রোববার বিকালে লাগা ভয়াবহ আগুনে অন্যান্যদের মতো তার ঘরটিও পুড়ে যায়। এরপর থেকে একমাত্র সন্তানকে বুকে জড়িয়ে খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটছে তার। তার সন্তানেরও একমাত্র আশ্রয়স্থল বাবার বুকই।
আগুনে শাহীনের ঘর পুরোটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। টাকা-পয়সা, সোনা-দানা কিছুই বের করতে পারেননি। এমনকি ব্যবহৃত মোবাইলটিও বের করতে পারেননি। শুধু তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে কোনো মতে জীবন নিয়ে বের হয়েছেন।
শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, আগুন লাগার ১০-১৫ মিনিট আগেও আমি বাসায় ছিলাম। একটি মাল (জিনিস) লোড-আনলোডের কাজ পাওয়ায় সেখানে যাচ্ছিলাম। বনানী যাওয়ার পর ফোনে খবর পাই বস্তিতে আগুন লাগছে। স্ত্রীকে বললাম, মেয়েকে নিয়ে বের হতে। তারপর নিজে কিছুটা পথ রিকশায়, কিছুটা পথ দৌড়ে বস্তিতে আসি। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই। গায়ের জামা ছাড়া একটি সুতাও বাইর করতে পারিনি। স্ত্রীরে ফোনটা পর্যন্ত পুড়ে গেছে।
দিন মজুরের কাজ করে কোনোদিন ৭০০ টাকা, কোনো দিন ৫০০ টাকা, কোনোদিন আবার ৩০০ টাকা আয় করেন শাহীন। যেদিন কাজ থাকে না সেদিন আয়ও থাকে না। জমানো সম্পদের মধ্যে ছিল শুধু সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও স্ত্রী ৪০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, আর কিছু আসবাবপত্র। আগুনে যার সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
শাহীন বলেন, সামনের দিন কীভাবে যাবে সেই চিন্তা করছি। এমনিতেই গরিব মানুষ। অর্থ-সম্পদ নাই। দুই-চার টাকা যা ছিল তাও শেষ। এখন আল্লাহই আমাদের ভরসা। তারপরও স্ত্রী ও মেয়ের কিছু হয়নি এজন্য আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।
শাহীনের স্ত্রী মৌসুমী বলেন, তিল তিল করে এই সংসার গোছাইছি। সবই শেষ। এখন কীভাবে যে চলবো, কোথায় থাকবো জানিনা। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পেলে হয়তো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হবে। তা না হলে নিজেরাই হয়তো আবার সব সাজাতে হবে। সামনে কী হবে সেটি আল্লাহ ভালো জানেনে।
রোববার (২৪ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে ভয়াবহ আগুন লাগে কড়াইল বস্তির একটি অংশে। আগুনে পুড়ে যায় কয়েকশ টিন-কাঠের ঘর। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর থেকেই শাহীনের মতো খোলা আকাশের নিচে সময় কাটছে ক্ষতিগ্রস্তদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা,মার্চ ২৫,২০২৪
এসসি/এমএম