ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘কত বছর পর ঈদে শান্তিতে বাড়ি আসলাম!’

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৪
‘কত বছর পর ঈদে শান্তিতে বাড়ি আসলাম!’

সিরাজগঞ্জ: ঈদ এলেই ঘরে ফেরার স্বপ্ন মাথাচারা দিয়ে ওঠে ৬৫ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেনের। নানা ভোগান্তি মাথায় নিয়েও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য চলে আসেন তিনি।

যত কষ্টই হোক গ্রামের বাড়িতে না এলে ঈদের আনন্দটাই মাটি যেন তার।  

রাস্তায় দুর্ভোগ হবে-নিশ্চিত জেনেও নারায়ণগঞ্জ থেকে এবার স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিলেন। সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় এলাকায় এসে নেমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন। বাসের কেবিন থেকে ব্যাগ নামাতে নামাতে তিনি বলছিলেন, ‘কত বছর পর ঈদে এমন শান্তিতে বাড়ি আসলাম’।  

ইসমাইল বলেন, নারায়ণগঞ্জে চাকরি জীবনের অবসর নিয়েছি। সেখানেই সন্তানদের সঙ্গে থাকতে হয়। কিন্তু বছরে একবারও হলেও নাড়ির টানে বাড়িতে ফেরার সাধ জাগে। প্রতি বছর ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বাসে জার্নি করে বাড়ি আসতে হতো। এবার ব্যতিক্রম ঘটলো। মাত্র ছয় ঘণ্টাতেই বাড়ি আসতে পেরেছি। অনেক ভাল লাগছে।  

সি-লাইন পরিবহণযোগে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসছিলেন কামারখন্দের বড়ধুল গ্রামের ফরিদুল ইসলাম। ইসমাইলের মতো তিনিও বললেন, এলেঙ্গায় সামান্য একটু জ্যাম ছিল। তাছাড়া পুরো রাস্তায় গাড়ি টেনেই এসেছে।  

গাজীপুর থেকে ট্রাকযোগে আসছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক নুরন্নবী। তিনি বলেন, মাত্র দুই ঘণ্টাতেই আমরা আসতে পেরেছি। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।  

অপর একটি ট্রাকে হাস্যোজ্জল সেলিনা, দবির উদ্দিন, আব্দুল গাফ্ফার, সোহেল রানা রনি, জান্নাতিসহ প্রায় ২০/২৫ জন গার্মেন্টস শ্রমিক। আনন্দে আত্মহারা এসব শ্রমজীবি মানুষ বলেন, এত সুন্দরভাবে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারবো কোনো দিন ভাবতে পারি নাই। রাস্তায় লম্বা কোনো যানজট ছিল না। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্বপার পর্যন্ত কিছুটা ধীরগতি ছিল। আর পুরো রাস্তাই স্বাভাবিকভাবে এসেছে গাড়িগুলো।  

জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের চারটি রুট দিয়ে ২২ জেলার গাড়ি চলাচল করে। প্রতি বছর ঈদের মৌসুমে দুই/তিনগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে এ রুট দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই সিরাজগঞ্জের এসব মহাসড়ক ছিল উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের গলার কাঁটা। এ বছর সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজের অগ্রগতি ও পুলিশি তৎপরতার কারণে এখন পর্যন্ত যানজট এবং দুর্ভোগ মুক্ত রয়েছে সিরাজগঞ্জের সব মহাসড়ক।  

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, সোমবার রাত থেকেই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। রাতভর হাজার হাজার গাড়ি পারাপার হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গগামী লেনে প্রচুর গাড়ির চাপ ক্রমশ বাড়ছে। দীর্ঘ লাইন ধরে যানবাহনগুলো চলছে। তবে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কোথাও কোনো গাড়ি থেমে নেই।  

সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মো. জাফর উল্ল্যাহ বলেন, গতকাল রাত থেকে আমরা ড্রোন ক্যামেরা উড়িয়ে মনিটরিং করছি। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক পুলিশের টিম পাঠিয়ে সমাধান করা হচ্ছে। ড্রোন ক্যামেরার ভিডিও সরাসরি জেলা পুলিশের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রচার করা হচ্ছে।  

বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল হক পাভেল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পার হয়েছে ৪৩ হাজার ৪২৭টি যানবাহন। মোট টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি তিন লাখ ৬৬ হাজার ৮৫০ টাকা।  

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সার্বিক চেষ্টা করেছে। জেলার সব মহাসড়কে ৭০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে পেট্রোল টিম, মোবাইল টিম। বিভিন্ন পয়েন্টে ৬টি রেকার রাখা আছে। দুর্ঘটনাজনিত কারণে গাড়ি বিকল হলে তাৎক্ষণিক সেটাকে সরিয়ে ফেলা হবে। থ্রি-হুইলার ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।