পাবনা (ঈশ্বরদী): পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রসূতি নারীর বাচ্চা প্রসব হয়। এ সময় ট্রেনে থাকা ডা. নাজমীন আক্তার মিতা প্রসূতি মাকে সহযোগিতা করেন।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা খুলনা অভিমুখী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে ফের আলমডাঙ্গা যাওয়ার পূর্বে রাজশাহী স্টেশনে তাকে এই সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এ সময় রাজশাহী রেল স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল কুমার কর্মকার, রাজশাহী রেল স্টেশনের স্টেশন সুপারিন্টেনডেন্ট আব্দুল করিম, সেই নারী চিকিৎসকের স্বামী, বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমানে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রিয়াদ মাসুম প্রমুখ।
ট্রেনে সেই বাচ্চা প্রসবের নেতৃত্বদানকারী ডা. নাজমীন বগুড়া টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গাতে নিয়মিত শিশুদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। ওইদিন আলমডাঙ্গা রেল স্টেশন থেকে তিনি কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজশাহী আসছিলেন।
সংবর্ধনা পেয়ে বাচ্চা প্রসবের নেতৃত্বদানকারী চিকিৎসক ডা. নাজমীন আক্তার মিতা তার অনুভূতি জানিয়ে বাংলানিউজকে জানান, আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুর জন্য। আমার আজকের এই প্রাপ্য সম্মান শুধু আমার একার নই এটি আমার পরিবারের এবং আমার মেডিকেল কলেজ এবং সর্বোপরি সব ডাক্তার সমাজের।
শিশু ডাক্তার ডা. নাজমীন আক্তার মিতা আরও জানান, সোমবার (৮ এপ্রিল) দিনটি ছিল আমার জন্য অনেক স্মৃতিবহুল একটি দিন কারণ ওই রকম অবস্থায় কাওকে সাহায্য করা সত্যিই সৌভাগ্যের। সেটা যদি হয় দুইটা জীবনের ব্যাপার তাহলে তো আরও অনেক বেশি ভালো অনুভূতি কাজ করে। কারণ এই মেডিকেল প্রফেশনে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে প্রতিদিন যেগুলা প্রকাশ না হলেও আমার সেদিনের ঘটনাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়ার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে আমাকে শুভকামনা ও দোয়া জানিয়েছেন এর জন্য আমি সমগ্র দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।
ডা. নাজমীন আক্তার মিতা জানান, এই কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, বিশেষভাবে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মহোদয় অসীম কুমার তালুকদার শুরু থেকে আজকে সম্মাননা প্রদান অব্দি নিজেই সব কিছু দেখভাল করেছেন। স্যারের দায়িত্বশীলতায় আমরা মুগ্ধ। ডাক্তারদের এমন ভাল কাজগুলো সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে সবসময় জনগণের সামনে আসুক যাতে করে ডাক্তার সমাজের প্রতি রোগীর আস্থা আরও বেড়ে যায়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, ট্রেনে সাধারণত বাচ্চা প্রসবের কোনো সুবিধা থাকে না। সেদিন এক প্রসূতি মায়ের প্রসব বেদনা উঠার পরপরই ট্রেনের দায়িত্বরত সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ট্রেনে ডাক্তার আহ্বান করলে ডাক্তার নাজমিন এগিয়ে এসে বিষয়টিকে অত্যন্ত সহজ করে দেয়। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই একটি সুস্থ সুন্দর শিশু জন্মগ্রহণ করে। এটা আমাদের জন্য ছিল একটি বিরল ঘটনা। এজন্যই মন্ত্রী ও আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে উপহার ও সম্মাননা দিয়ে প্রকারান্তরে আমরা নিজেরাই এই ঘটনার সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করছি।
এর আগে সোমবার (৮ এপ্রিল) সকালে খুলনা থেকে রাজশাহী অভিমুখী কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ছেড়ে আসে। ট্রেনটি সকাল সোয়া ৯টার দিকে দর্শনা রেল স্টেশনে পৌঁছালে ওই প্রসূতি নারী তার পরিবারসহ দর্শনা রেলস্টেশন থেকে 'ঙ' নম্বর বগিতে উঠে। ট্রেনটি বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভেরামারা রেলস্টেশনে এলে প্রসূতির প্রসব বেদনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
এসএম
বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৪ পিএম, এপ্রিল ১৩, ২০২৪ /