ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

৮ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতানোর অভিযোগ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৪
৮ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতানোর অভিযোগ

মৌলভীবাজার: গত ৮ মে অনুষ্ঠিত জুড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময়ের শেষদিকে ৮ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক।

কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র, ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির কারণে তাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই প্রার্থী।

সোমবার (২০ মে) উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।

এম এ মোঈদ ফারুক বলেন, গত ৩০ এপ্রিল নির্বাচনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে প্রথম আলো পত্রিকায় “এবার মোঈদের আছে ৭০ লাখ টাকার ‘প্রাডো’ গাড়ি” শিরোনামে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচনকালীন ভোটারদের কাছে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং নির্বাচনে এর প্রভাব পড়েছে। সংবাদে বোঝানো হয়েছে, গত নির্বাচনের পর আমি এ প্রাডো গাড়ির মালিক হয়েছি। নির্বাচন চলাকালীন আমি নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় এ বিষয়ে যথাযত পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমি আপনাদের মাধ্যমে এ সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রথম আলো পত্রিকায়ও আমি এর প্রতিবাদ জানাব।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আমি গাড়িটি ক্রয় করি এবং ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আমি গাড়িটি বিক্রির জন্য জনৈক ক্রেতার কাছে ২০ লাখ টাকা বায়নার মাধ্যমে বিক্রি করি। পরে সেই ক্রেতা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধে অক্ষম হওয়ায় আমি বায়নার টাকা ফেরত দিয়ে গাড়ির মালিকানা বুঝে পাই। যেহেতু ২০১৯ সালের নির্বাচনের পূর্বে আমি গাড়ির মালিকানায় ছিলাম না, তাই তখনকার হলফনামায় আমি উল্লেখ করিনি। এবারের নির্বাচনে গাড়িটি আমার মালিকানায় থাকায় হলফনামায় উল্লেখ করেছি।

পরাজিত এই প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, জুড়ী একটি ছোট উপজেলা। নির্বাচনে ৪৪টি কেন্দ্রের কোনোটাই এরকম দুর্গম নয় যে, যেগুলোতে পূর্বের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো লাগবে। তবুও কারচুপি ও জালিয়াতি করা সহজ হবে এরকম প্রান্তিক ৭টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের পূর্বের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। সমমান অন্যান্য কেন্দ্রের নির্বাচনের ফলাফলের সাথে এগুলোর বেশ অমিল পাওয়া গিয়েছে। বিকেল চারটায় কন্ট্রোল রুমের প্রেরণ করা তথ্য অনুযায়ী গড়ে ভোট কাস্টিং হয়েছে ৩৯ শতাংশ। তবে এই ৭টি কেন্দ্রের মধ্যে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫১.২৯, দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৯.৫৯, এলবিনটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৪.৯৬, রাজকি চা-বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪৩.৭৫, ফুলতলা চা-বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫২.২৫ শতাংশ ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে। এগুলোতে পূর্বের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের অনেক ভোটার মনে করছেন।

তিনি বলেন, ভোটগ্রহণের সময়ে কেন্দ্র থেকে প্রিজাইডিং অফিসাররা নিয়মানুযায়ী প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর উপজেলা পরিষদে স্থাপিত কন্ট্রোলরুমে মোট কাস্টিংসহ ভোটগ্রহণের তথ্য প্রেরণ করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল চারটায় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় (কন্ট্রোল রুম) থেকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরিত ‘ভোটগ্রহণ সম্পন্ন প্রতিবেদন’-এ ভোটগ্রহণের শতকরা হার ৩৯ শতাংশ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফলে প্রায় ৪৭ শতাংশ ভোট কাস্টিং দেখানো হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অতিরিক্ত ৮ শতাংশ ভোট ‘ঘোষিত জয়ী প্রার্থী’র পক্ষে দেখানো হয়েছে।

এম এ মোঈদ ফারুক আরও বলেন, ফলাফলে বাতিলকৃত মোট ভোটের সংখ্যায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮৪৮টি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮৭৩টি ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান পদে ১৪৭২টি ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে, যা গভীর সন্দেহের অবকাশ রাখে। প্রায় ৪০০ বাতিল ভোট ‘ঘোষিত জয়ী প্রার্থী’র পক্ষে দেখানো হয়েছে।

পরাজিত প্রার্থী এম এ মোঈদ ফারুকের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দিতে অপারগতা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৪
বিবিবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।