বরিশাল: পবিত্র ঈদুল আযহা আসন্ন। আগামী মাসে পালিত হবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
কোনো ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করেই দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটা তাজা করছেন খামারিরা। তাদের মতে, ভারতীয় পশুর আমদানি না থাকায় গত কয়েকবছরে দেশের ভেতরের পশুর বাজার ভালো যাচ্ছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে খামারিদের রোগ-বালাইহীন পশুর কদরও থাকছে আলাদা।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাশাইল গ্রামের খামারি শামীম সিকদারের গরুর ফার্মে সরেজমিন দেখা গেছে, পাকা ফ্লোর ও ফ্যান। খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের দেশি খাদ্য। সার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক খামারে এভাবেই আদর-যত্নে লালিত হচ্ছে গরু। ২৪ ঘণ্টা এমন পরিচর্যা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব খামারে বেড়ে ওঠা গরুগুলো হয়ে উঠছে হৃষ্টপুষ্ট ও সুন্দর।
শামীম শিকদার বলেন, ২০১২ সালে বিশটি দেশি প্রজাতির ষাঁড় কিনে মোটাতাজা শুরু করেন। এখন বর্তমানে তার খামারে অর্ধ শতাধিক ষাঁড় রয়েছে। বাড়িতেই ষাঁড়গুলো পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাহায্য সহযোগিতায় লালন পালন করে আসছেন। কোরবানির ঈদে গরুগুলো বিক্রি করবেন। কোনো অসাধু পন্থা অবলম্বন না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে খড়, খৈল, ভুসি ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে গরুগুলোকে মোটাতাজা করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা খরচ একটু বেশি হলেও, পশু কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে থাকে না।
এ নুর ফিশারিজের মালিক কাজী নজরুল ইসলাম জানান, ভারতীয় গরু আসা কমে যাওয়ায় এখন তিনি এ খামার ব্যবসায় জোর দিয়েছেন। বর্তমানে তার খামারে থাকা গরুগুলোকে সন্তানের মতো লালন করছেন। তার মতো আরও অনেকে খামার পরিচালনায় ঝুঁকছেন এখন।
তবে বড় আকারের গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে অনেকেই বিপাকেও পড়ছেন। কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে বড় গরুর ক্রেতা নেই। এখানে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় ধরনের ষাঁড় বা দামি গরুতে সাধারণত ঢাকা ও চট্টগ্রামের ক্রেতারা আকৃষ্ট বেশি হন। তাই ফ্রিজিয়ান জাতের বা বড় গরু পালন করলে তা বিক্রি করতে ঢাকায় ছুটতে হয়। নয়তো ঝক্কি পোহাতে হয়।
তবে সময়ের সাথে সাথে স্থানীয়ভাবে বড় আকারের পশুর বাজার ভালো হবে বলে মত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রদীপ কুমার বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে একেবারেই প্রাকৃতিক ও নির্ভেজাল পদ্ধতিতে অনেকেই গরু লালনপালন করেছেন বিভিন্ন খামারি।
তিনি বলেন, আমরাও সার্বক্ষণিক এলাকার খামারিদের খোঁজ খবর রাখছি। গরু মোটা তাজাকরণের ক্ষেত্রে কোনো রকম ক্ষতিকারক ওষুধ কিংবা ইনজেকশন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি খামারিদের। এছাড়া গরু মোটাতাজাকরণের বিষয়ে খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা মাঠে পর্যায়ে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৪
এমএস/এমজে