খুলনা: ঝড়ে আমাগে অনেক ক্ষতি অইছে। অথচ কোনো ত্রাণ পাইনি।
তিনি জানান, ঝড়ে এ পাড়ার প্রায় অর্ধশত ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। যাদের মধ্যে অনেকে অন্যের ঘরে রয়েছেন। নতুন করে ঘর সংস্কার করার মতো টাকা নেই তাদের। অসহায় এসব মানুষ ঘর সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য সরকারি সহায়তা পাওয়ার আশা করছেন।
সাইফুল গাজী নামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, ঝড়ে আমাগে ঘর পইরে গেছে। মালামাল সব ভাইসে গেছে। পরণের কাপড় ছাড়া কিছু নেই। ভাবিলাম ত্রাণ পাব। কিছুই পাইনি। আমাগে ত্রাণ নাহি কেআর পাড়ার লোকদের দিছে।
ঝুলন্ত পাড়ার জিল্লুর রহমান ও সাইফুল গাজীর মতো আরও অনেকে জানান, ঝুলন্ত পাড়ার অধিকাংশের প্রধান জীবিকা হলো সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরা। জুনের ১ তারিখ থেকে সুন্দরবনে মাছ ধরা নিষেধ। এখন তারা মাছ ধরেও জীবিকা চালাতে পারছে না। আবার কোন ত্রাণও পাচ্ছে না। এতে করে খুব কষ্টে আছেন এসব মানুষ।
খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনী বাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা দিপ্ত সরকার বলেন, আমাদের পাড়া বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ আমরা কোন ত্রাণ পাইনি। পেয়েছে পুরানো পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকার মানুষ। আমাদের এলাকার পানি নেমে গেছে। বাঁধ সংস্কারের জন্য কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ঝুলন্তপাড়ার ন্যায় দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের কালাবগী, ফকিরকোনা এবং পণ্ডিতচন্দ্র স্কুলসংলগ্ন এলাকা, তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া বাজার, কামিনীবাসিয়া বাঁধ এলাকায় প্রলংকারী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হলেও ত্রাণ বা কোন সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ দূর্গতদের।
কালাবগীর গুরুর কোনার মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৫ শত বিঘা ঘের ঝড়ের দিন পানিতে ভেসে গেছে। একবার স্থানীয় সংসদ সদস্য খোঁজ নিয়েছিলেন কিন্তু কেউ কোন সাহায্য সহযোগিতা করেন নি। সরকারি কিংবা বেসরকারি কেউ তাকে সহযোগিতা কিংবা প্রণোদনা দেওয়া হবে এমন আশ্বাসও দেয়নি। অথচ এত বড় ঘের ডুবে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত খুলনার দাকোপের উপকূলে এখনো চলছে মানুষের আহাজারি। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে খোলা আকাশের নিচে খুপরি ঘর বানিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের ঘরে। এলাকায় ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ যেমন বিপর্যস্ত, তেমনি তাদের জীবন জীবিকাও এখন বড়ধরনের হুমকির মুখে। তারা জানেন না কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াবেন। ঘরের যে সংস্কার করবেন, সেই টাকাপয়সা নেই অধিকাংশের। তাই ঘর সংস্কারের জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, সরকার, আওয়ামী লীগ ও এনজিও এর পক্ষ থেকে দাকোপে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৪
এমআরএম/এমএম