ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জুন ২০২৪, ১৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রিমালের ঘা রায়েন্দা-মাছুয়া ঘাটে, ২৫ দিন ধরে বন্ধ ফেরি চলাচল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৪
রিমালের ঘা রায়েন্দা-মাছুয়া ঘাটে, ২৫ দিন ধরে বন্ধ ফেরি চলাচল

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরিঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২৫ দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।  

শরণখোলা ও পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র ফেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

দ্রুত ঘাট সংস্কার করে ফেরি চালুর দাবি তাদের।  

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বাগেরহাট বিভাগ বলছে, সংস্কার কাজের অনুমতি চাওয়া হয়েছে, অনুমতি পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।

২০২১ সালের ১০ নভেম্বর রায়েন্দা-মাছুয়া রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়। প্রতিদিন এই ফেরিতে ২০-২৫ হাজার মানুষ ও সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ২৭ মে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ফেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এ নৌপথে চলাচলকারীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বাগেরহাটের রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরির রায়েন্দা অংশের ঘাট ও পার্শ্ব রাস্তাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেরির পন্টুন, পন্টুনের সঙ্গের সড়ক, স্টিলের রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পার্শ্ব রাস্তা বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেরিঘাটে থাকা ছোট ছোট দোকান। ফলে রিমালের পর থেকে শরণখোলা ও মঠবাড়িয়ায় যোগাযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ফেরিটি বন্ধ রয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বলেশ্বরের দুপাড়ের মানুষজন। ফেরিঘাট থেকে কিছু দূরে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ট্রলারঘাট থাকলেও, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে জরুরি যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। ভ্যান, পিকআপভ্যান, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নছিমন (থ্রি-হুইলার) ও ট্রাক পারাপার করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফেরিঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা দ্রুত সংস্কার করে ফেরি চলাচলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

রায়েন্দা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, রিমালে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে সব থেকে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে ঘাটটি নষ্ট থাকায়। জরুরি প্রয়োজনেও যেতে পারছি না। ট্রলারে যেতে ৫০-১০০ টাকা দিতে হয়। তাও তাদের ইচ্ছেমতো ছেড়ে যায়। এছাড়া ভ্যান ও মালামাল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।  

বড় মাছুয়া এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, আসলে ফেরিটি যে কত উপকারী ছিল আমাদের জন্য তা এখন বুঝতে পারছি। ফেরি বন্ধ থাকায় ঈদের সময় অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে যাননি, আবার রায়েন্দা থেকে কেউ আসেনি এলাকায়। দ্রুত ফেরি চালু করা দরকার, তা নাহলে আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

ফেরিঘাটের পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হালিম শেখ বলেন, ফেরি চালু হওয়ার পরে ঘাটের পাশে দোকান দিয়ে মোটামুটি সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু রিমালের কারণে ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও সংস্কার না করার কারণে ২৫ দিন ধরে ফেরি বন্ধ রয়েছে। এতে এ নৌপথে চলাচলকারীদের যেমন ভোগান্তি হচ্ছে তেমনি আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কমে গিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

মৌ প্রিয়া নামে এক গৃহিণী বলেন, ফেরিটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। কিন্তু বন্দ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছি। কবে ঠিক হবে জানি না। যত দ্রুত ঠিক হয়, তত আমাদের জন্য ভালো।  

বোরহান উদ্দিন নামে এক গরু-ছাগল ব্যবসায়ী বলেন, এই ফেরি দিয়েই আমরা গরু-ছাগল মঠবাড়িয়া নিয়ে বিক্রি করতাম। কিন্তু ফেরি বন্ধ থাকায় কোরবানির সময় গরু-ছাগল নিতে পারিনি, আবার মঠবাড়িয়ার লোকজন শরণখোলায় আনতে পারেনি। এটা একটা ভোগান্তি। যত দ্রুত সম্ভব এই ভোগান্তি নিরসন করার দাবি জানাই।

এদিকে সওজ বাগেরহাট বিভাগ বলছে, ফেরিঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা সংস্কার করার প্রস্তাব প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।  

সওজ বাগেরহাট বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ফেরির পন্টুন, ঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু জায়গা একেবারে ওয়াশআউট হয়ে গেছে। এটি সংস্কারের প্রস্তাব ও অর্থ বরাদ্দের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। আশা করি খুব দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।