ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কোটা আন্দোলনে নিহত নাজমুল

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় নাজমা বেগম

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় নাজমা বেগম

মাদারীপুর: ১৯ জুলাই শুক্রবার কোটা আন্দোলনের সময় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে রাজধানীর গুদারাঘাট এলাকায় কোমড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাজমুল (২১) নামে এক যুবক।

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা এখন নির্বাক মা নাজমা বেগম।

তার এই আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে আশেপাশের পরিবেশ। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি ক্যামনে এই যন্ত্রণা সহ্য করবো। আমার তো একটাই ছেলে আছিল, খোদা। আমার এই সন্তান ছাড়া তো আর কেউ নাই। কষ্ট কইরা মানুষ করলাম, পড়াইলাম, লেখাইলাম, এখন কী পাইলাম। মানুষের হাতে গুলি খাইয়া আমার মানিকের মরতে হইলো, কী দোষ ছিল ওর। আমার বাবারে তোমরা আইনা দাও। আমি তো মা, আমি তো সহ্য করতে পারছি না। আমি ক্যামনে বাঁচমু, হায় আল্লাহ’।

নিহত নাজমুল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার চাপাতলি এলাকার সৈয়দ আবুল কায়েসের ছেলে। তবে নাজমুল তার মায়ের সঙ্গে নানা বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর উত্তরকান্দি গ্রামের মাতুব্বরবাড়ি থাকতেন। মা নাজমা বেগম কাজের সুবাদে ঢাকার আফতাবনগরে ছেলেকে নিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকতেন।

নাজমুল হাসান লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম একটি চাকরি করতেন। তার মা নাজমা বেগমও দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজধানীর একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালে কাজ করছেন। দুইজনের আয়ে তাদের চলতো সংসার। বেশ সুখেই ছিলেন তারা। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্নও ছিল মায়ের।  

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে খাবার খেয়ে নাজমুল আফতাবনগর থেকে বনশ্রী ফরাজি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। এই হাসপাতালে পার্ট টাইম ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি। ঢাকায় ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছিল। তখন নাজমুল সংঘর্ষ এড়াতে গুদারাঘাট এলাকা দিয়ে বনশ্রীর দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। গুদারাঘাটের সেতুতে উঠার পরেই গুলিবিদ্ধ হন নাজমুল। পরে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ নাজমুলকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গুদারাঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমুল মারা যান।

নিহত নাজমুুলের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘মা-ছেলে একলগে কাম করতাম, ঘর ভাড়া দিতাম, সমান সমান থাকতাম, বাবজান আমারে কইতো, ‘মা তোমার আর কষ্ট করতে হইবে না। আমি টাকা জমিয়ে বিদেশ জামু, আপু চাকরি করবো, তোমার আর কষ্ট থাকবো না। ’ এগুলো মনে পড়লে আমার বুকের মধ্যে যে ক্যামন করে তা কইতে পারতেছি না। সরকারের কাছে একটা জিনিসই চাই, আর কোনো মার বুক যেন খালি হয় না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চোখের সামনে সব ঘটনা ঘটলো। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই আমার ছেলেডারে বাঁচাইতে পারলাম না। চোখের সামনে বাপজান আমার মইরা গেলো। আমার বাবায় তো কোনো ঝায়-ঝামেলায় থাকতো না। দেশে কোনো ক্ষতি করে নাই। তাহলে ওরে কেন গুলিতে জীবন দিতে হইলো?।

নাজমুলের বড় বোন তানজিলা আক্তার বলেন, আমার লেখাপড়ার কাজে সহযোগিতা করতো ভাই। এভাবে মরে যাবে এটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। বুকের ভেতরটায় যে কি হচ্ছে তা কাউকে বোঝাতে পারবো না। আমাকে ভাইকে কেন গুলি করে মারা হলো, এটার বিচার আমি আল্লাহ ছাড়া কার কাছে দেবো?।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, সহিংসতায় অনেকেই মারা গেছেন। তবে সেই তথ্য আমাদের কাছে আপাতত নেই। তবে নিহতের পরিবার কোনো সহযোগিতার জন্য আমাদের কাছে আবেদন করলে তাদের সাধ্য মত সহযোগিতা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।