ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা

খুলনা: রংপুরের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ বন্দুকের নলের সামনে বুকে পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস দেখান। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রতাপের শাসনের পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান।

শিক্ষার্থীদের রক্তের সাগরে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তিকামী মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজয়োল্লাস করেন আপামর জনতা।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে গঠন করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের কাছে খুলনার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, নাগরিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েকজন বাংলানিউজের কাছে জানিয়েছেন তাদের প্রত্যাশার কথা।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুল আলম বলেন, ছাত্র-জনতার এই গণবিপ্লবকে স্বাগত জানাই। শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। এই গণবিপ্লবের অংশ হতে পেরে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। ছাত্র-জনতার এই আত্মত্যাগকে স্মরণ করে রাষ্ট্রের প্রতিক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলে সমান অধিকার ভোগ করবে, রাষ্ট্রকে আপন ও নিরাপদ ভাববে।

তিনি বলেন, ছাত্র-শিক্ষক-জনতার নতুন এ সরকারের কাছে দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে ছাত্র-শিক্ষকের জন্য একটি আধুনিক ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ গঠন করা। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে জিডিপির ন্যূনতম ৬ শতাংশ বরাদ্দ প্রদান করা যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক র‍্যাংক আরও উন্নত হয়। ছাত্রদের জন্য আধুনিক হল ব্যবস্থার পাশাপাশি লেজুরবৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা দরকার। একইসাথে, শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল অতি প্রয়োজনীয় যা বাস্তবায়ন হলে মেধাবী ছাত্ররা এই পেশায় আগ্রহী হবে।

মাহমুদুল আলম মনে করেন, এই মুহূর্তে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো দেশে লাখ লাখ বেকার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তিনি বলেন, এতে করে দেশের তরুণ সমাজ বিদেশমুখী হওয়া কমিয়ে বাংলাদেশকেই এগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করবে। সর্বোপরি, দেশের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তোলা ব্যতীত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাই শিক্ষাকে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিবেচনা করে নতুন সরকার ছাত্র-শিক্ষক-জনতার ‘নতুন বাংলাদেশের’ স্বপ্নকে বাস্তবরূপ দেবে।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, দীর্ঘ দিনের অপশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, স্বৈরতন্ত্র- এসব বিষয়ে মানুষ একেবারে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে ছাত্র জনতা প্রতিহত করে একটা বিজয় অর্জন করেছে। এখন আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি অপশাসন, দুঃশাসন দূর করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাহী বিভাগসহ সব বিভাগ যেন প্রশাসনের রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকে। ব্যবসা বাণিজ্যে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল বিগত সরকারের আমলে তা যেন ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনে। একটা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র তৈরি করে। সব ক্ষেত্রে সংস্কার করে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’ কবিতার মতো তারুণ্যের জয়গানে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে এ দেশ। আমরা তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে চাই। দেশ, দশের কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা কখনও পরিচ্ছন্নতাকর্মী হয়ে রাস্তা, ড্রেন পরিষ্কার করতে এগিয়ে এসেছি আবার কখনও ট্রাফিক পুলিশের রূপ নিয়ে রাস্তায় যানজট নিরসন করেছি। সুতরাং সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়তে আমরা তরুণ প্রজন্ম অঙ্গীকারবদ্ধ।

উন্নয়ন কর্মী সেলিম বুলবুল বলেন, একজন দেশপ্রেমী সচেতন নাগরিক হিসেবে ড. মোহম্মদ ইউনূসের কাছে প্রত্যাশা, তিনি তার পরিষদ নিয়ে প্রথমে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসবেন। এরপর সরকারি কার্যালয়সহ সকল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্ম পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা, বিদেশের সকল মিশনগুলোকে প্রবাসীদের আস্থা ও ভরসার জায়গায় নিয়ে আসা, বিমান বন্দরে ও বিমানকে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ মর্যাদা দেওয়াসহ স্থানীয় সরকারের সকল কার্যালয়গুলো, যেমন- সিটি কর্পোরেশন পৌরসভা ও ইউনিয়ন কার্যালয়কে গতিশীল করা। এজন্য এই সরকারকে যতদিন সময় প্রয়োজন তা তাদের দেওয়া এবং সকল রাজনৈতিক দলকে এই সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করা উচিত।

খুলনা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী মো. হেলাল হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টার কাছে আমার প্রত্যাশা চিকিৎসাখাতে এমনভাবে নজর দেওয়া হোক যেন এক দুই বছর পর থেকে বিদেশ থেকে মানুষ এই দেশে চিকিৎসা নিতে আসে। বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতকে কেন্দ্র করে ভারত প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা আয় করছে। এবার আমাদের দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা চাই।

খুলনা উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি কানিজ সুলতানা বলেন, প্রথমেই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। সাথে সাথে এ সরকারের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতিসহ সমস্ত জায়গায় নারীর সক্রিয় ও অবাধ অংশগ্রহণের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে নারী বান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রত্যাশা করি।

সাংস্কৃতিক কর্মী কামরুল কাজল বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ শিক্ষার্থীরা যে পরিবর্তনের জন্য রক্ত দিয়েছেন সেটা যেন বৃথা না যায়। কেউ যেন ফ্যাসিস্ট হতে না পারে, ফ্যাসিস্ট হয়ে ক্ষমতায় থাকতে না পারে, তেমন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়; ঘুষ-দুর্নীতির অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়; সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত সমাজ চায়। আমরা দূষণমুক্ত পরিবেশ; ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন চাই। সর্বোপরি আমাদের ভাইবোনদের আত্মত্যাগ, রক্ত, চোখের জল যেন বৃথা না যায় সে দিকে যেন সবার দৃষ্টি থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০২৪
এমআরএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।