ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সড়কে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সড়কে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয়। এরপরই রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের কর্মকাণ্ডের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে।

ভাঙচুর করে ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় রাজধানীর অধিকাংশ থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বক্স।

জনরোষ থেকে বাঁচতে নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় কর্মবিরতিতে চলে যায় পুলিশ। এতে ভেঙে পড়ে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রাফিক ব্যবস্থাও টালমাটাল অবস্থায় পড়ে। এ সময় সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিজ নিজ এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় ত্রাতা হয়ে আসে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। শুরু করেন সড়কের শৃঙ্খলা ও ‘ডাকাত গুজবে’ এলাকার নিরাপত্তা রক্ষার কাজ।

গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সড়ক রক্ষায় দেখা গেছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর সব সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন তারা। পরোয়া করেননি রোদ, বৃষ্টি কোনো কিছুই। সড়কের যেনতেনভাবে পরিবহন চালকরাও এ সময় নিজেদের বদ অভ্যাস পরিবর্তনে বাধ্য হন। নিয়ম মেনে যানবাহন চালাচ্ছেন তারা।

ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় রাজধানীর সড়কগুলোয় কিছু দুর্ভোগের সৃষ্টিও হয়। আবার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় পুলিশের দাবির কথা বিবেচনা করা হবে আশ্বাস দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাহিনীকে নিজ কাজে ফেরার নির্দেশ দেয়। এক সপ্তাহ পর ট্রাফিক পুলিশ নামে রাস্তায়। এর আগে অবশ্য পুলিশ সদস্যরা অল্প বিস্তর কাজ শুরু করে রাজধানীতে।

সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। তারা রাস্তায় এলে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাগত জানান। তারপর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বুঝে নেয় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এরপর পুরোদমে কাজ শুরু করেন তারা।

সাধারণ জনগণের দাবি, কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে পুলিশকে। অহেতুক সাধারণ মানুষকে কোনো হয়রানি করা চলবে না। সেই সঙ্গে সড়কে চলাচলরত সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শৃঙ্খলা রক্ষার অনুরোধ করেন ছাত্র-জনতা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা অপরিহার্য। তারা সড়কে থাকলে সবাই শৃঙ্খল ও নিয়ম মেনে চলাচল করবেন বলে আশা তাদের।

ঢাকা মহানগরে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর। সোমবার সকাল থেকে এই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা এসময় তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। শুধু তা-ই নয়, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা না থাকায় তারা রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে নিরলস পরিশ্রম করেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা পূর্ব জোনে ১ সহকারী কমিশনার (এসি), পাঁচ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ২৮ সার্জেন্ট অফিসার, তের সহকারী উপপরিদর্শক ও ৬০ কনস্টেবল দায়িত্ব পালনে মাঠে কাজ করছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তৎকালীন সরকার বল প্রয়োগ করে। সেটি প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীরাও নিজেদের শক্তির জানান দেয়। এ দুয়ের মাঝে পড়ে উত্তরা পূর্ব জোনের এক ট্রাফিক সদস্য নিহত হয়েছিলেন।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা পূর্ব জোনের আব্দুল্লাহপুর বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) সালাহউদ্দীন প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা রোববার বিকেল থেকে কাজে যোগ দিয়েছি। সোমবার সকালে শিক্ষার্থীরা আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের স্বাগত জানিয়েছে। আমরা চাই সুন্দর একটি বাংলাদেশ। যে দেশে মারামারি-হানাহানি থাকবে না। যেখানে দুর্নীতি থাকবে না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমরা নতুন অনেক বিষয় শিখেছি। আমরা কাজ করতে চাই, নগরীতে যাতে সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে পারি। এজন্য নগরবাসীকেও সহযোগিতা করতে হবে। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে সড়কে চলাচল করতে আহ্বান জানাই। তবেই আমরা সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে পারবো।

রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং, জমজম টাওয়ারের মোড়, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী, গুলশান, মহাখালী, নতুনবাজার এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। ডিএমপি ট্রাফিক গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী, আমতলী, বনানী, বনানী পূজামণ্ডপ, গুলশান-২, গুলশান-১ ও পুলিশ প্লাজা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

গুলশান-১ নম্বর মোড়ে মোট সাত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ১ টিআই, দুই ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ৪ ট্রাফিক কনস্টেবল। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এএস এম হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কাজে যোগ দিয়েছি। নিজ নিজ দায়িত্ব ফিরে আসায় সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা আমাদের স্বাগত জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরাও আমাদের কাজে অনেক সহযোগিতা করছেন। মানুষ বলছে, ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া ঢাকা শহর অচল; যা হওয়ার হয়েছে, এখন সব কিছু সুন্দর করে চলুক। আমরাও চাই সব কিছু সুন্দর করে চলুক। জনগণকে যাতে আমরা যাবে আমাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারি সেই প্রত্যাশাই করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।