ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সেলাই মেশিনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
সেলাই মেশিনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন

২০১৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে শাহীমা বেগমের। এর পর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ঠকের হাট এলাকায় নিজ বাড়িতে দুই মেয়েকে নিয়ে থাকছেন।

সংসার চালাতে গিয়ে বেশ কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে। এক মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, আরেক মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

সংসারের খরচ চালানোর জন্য কখনো মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হচ্ছে আবার কখনো করতে হচ্ছে কাঁথা সেলাই। শাহীমার কপালে চিন্তার ভাঁজ কমিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ‘শুভ কাজে সবার পাশে’ এই স্লোগান সামনে রেখে সামাজের উন্নয়নমূলক কাজ করা বৃহত্তর সামাজিক সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে তিনি পেয়েছেন একটি সেলাই মেশিন। এর আগে তিনি বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করেছেন।

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ৬০ জন অসচ্ছল নারীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সেলাই মেশিন পেয়ে শাহীমা বেগম বলেন, ‘স্বামী থাকে না মেলা দিন হয়, ওমরা ঢাকাত আরেকটা বিয়া করছে। এলা আমি থাকি সরকারি আশ্রয়ের ঘরে। কোনো রকম ইয়ার উয়ার বাড়িত কাজ করি সংসারটা চালাই।
বেটি দুইটার লেখাপড়ার খরচ খুব। বসুন্ধরা হামাক সেলাই মেশিন দিছি, এটা আমার জন্যে খুব উপকার হইছে। কাতা সেলাই করি পোষায় না। এলা বাড়িতে কাপড়চোপড় বানামো। ইনকাম করমো।

উলিপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেন লাবনী আক্তার। তাঁর বাবা মারা গেছেন ২০১৮ সালে। অভাবের সংসারে মা গৃহিণী। খুব কষ্টে চলে লাবনীদের সংসার। সেলাই মেশিন পেয়ে লাবনী বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি। এখন আমাদের পরিবারের আয়ের উৎস হবে এই সেলাই মেশিন। নিজেদের জামাকাপড়ের পাশাপাশি অন্যেরও কাজ করা যাবে। একদিকে যেমন পরিবারের খরচ কমবে, অন্যদিকে বাড়তি আয়ও হবে। অনেক ধন্যবাদ বসুন্ধরা শুভসংঘকে আমাদের মতো পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ’ এমন পরিস্থিতি শুধু শাহীমা ও লাবনীদের নয়। কুড়িগ্রাম জেলার তিনটি উপজেলার যে ৬০ জন নারীকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেরই জীবনের গল্প করুণ। এমন পরিস্থিতির কথা জেনে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় তাঁদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা।

তিন দিনের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কালের কণ্ঠ’র কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আব্দুল খালেক ফারুক, আঞ্চলিক প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান মানু, উত্তরাঞ্চল মাল্টিমিডিয়া সমন্বয়ক সোহেল রানা স্বপ্ন, নিউজ টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি হুমায়ুন কবীর সূর্য প্রমুখ। সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ মানবিক কাজ করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, দুস্থদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা, অসচ্ছলদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন বিতরণ, বিনা সুদে ঋণ বিতরণ এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছে দেশসেরা এই প্রতিষ্ঠান।
সেলাই মেশিন পাওয়া চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা নাজমিন নাহিদ বলেন, ‘আমার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। সন্তানকে নিয়ে বেকায়দার মধ্যে রয়েছি। এমন সময় আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।  আমি এখন সেলাইয়ের কাজ করছি। সামনে এই কাজ করে ভালোভাবে চলতে পারব বলে আশা করছি। বসুন্ধরা গ্রুপ আমার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। তাদের জন্য অনেক দোয়া করি। ’
উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা জেবিন বলেন, ‘দুই বছর আগে বাবা মারা যান। তিন ভাই ও এক বোনের সংসার চালাতে মা হিমশিম খাচ্ছেন। আমার স্বপ্ন ছিল সংসারের হাল ধরব। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে ওই সুযোগ করে দিয়েছে। আমি বসুন্ধরার প্রতি কৃতজ্ঞ। ’ রিক্তা খাতুন নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ পেয়ে এখন মেশিন পেয়েছি। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। ধন্যবাদ জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে। এরই মধ্যে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছি। মানুষের ভালো সাড়া পাচ্ছি। ’ বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার অসচ্ছল পরিবারকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন দিয়েছি। আমাদের বসুন্ধরা শুভসংঘের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে আগামী দিনেও। বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় অসহায় মানুষের পাশে আছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।