ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ ভাদ্র ১৪৩১, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নীলফামারীতে খরায় পুড়ছে আমনের ক্ষেত

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪
নীলফামারীতে খরায় পুড়ছে আমনের ক্ষেত

নীলফামারী: অনাবৃষ্টিতে নীলফামারীর আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এতে বিবর্ণ হচ্ছে জমিতে লাগানো আমন চারা।

তিস্তার সেচ নালা ও খালবিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। সেচ সংকটের কারণে হাহাকার করছেন কৃষকরা।  

অতিরিক্ত তাপদাহ ও বৃষ্টির অভাবে ভরা আমন মৌসুমে নীলফামারীতে ফসলি জমিতে ধরছে ফাটল। সার প্রয়োগ ও নিড়ানির জন্য বাধ্য হয়ে কৃষকেরা অতিরিক্ত টাকা ব্যয়ে সেচের পানি কিনছেন। সেচ দিলেও তাপদাহের কারণে জমিতে পানি স্থায়ী হচ্ছে না। গত ১ মাসে স্বাভাবিক নিয়মে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ১৩২ মিলিমিটার। তাছাড়া তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানিও পাচ্ছে না কৃষকরা।  

যদিও জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, খরার প্রভাব কিছুটা থাকলেও সেচ দিয়ে আবাদে বাড়তি খরচ সামান্য বাড়লেও উৎপাদনে ঘাটতি হবে না।  

গত এক মাসে নীলফামারীতে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৬ দিন, তাও পরিমাণে সামান্য। অতিরিক্ত তাপদাহ ও বৃষ্টির অভাবে ফসলি জমিতে ধরেছে ফাটল। পানির অভাবে ধানি জমিতে নিড়ানি বা সার দিতে সমস্যা হওয়ায় বাধ্য হয়েই সেচ পানি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ব্যয়ে পানি কিনছেন কৃষক। অনেকে বাধ্য হয়ে আশপাশের পুকুর, খাল থেকে মোটর দিয়ে পানি দিচ্ছেন জমিতে।

কৃষি নির্ভর অর্থনীতি নীলফামারীর। ধান হচ্ছে প্রধান অর্থকরী ফসল। এবার আমন মৌসুমে নীলফামারীতে ১ লাখ ৩ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। কিন্তু আমনের ভরা মৌসুমে নীলফামারীতে বৃষ্টি নেই। গত ১ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমেও গভীর, অগভীর, বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত পাম্প দিয়ে সেচ নিতে হচ্ছে কৃষকদের। তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি খরা মোকাবিলায় দেওয়ার কথা থাকলেও সেখান থেকেও পানি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। ফলে সেচে অতিরিক্ত ব্যয়ে ধান উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, ‘ভূই বাড়িতে একনাও রস নাই’ (জমিতে সামান্যতম রসও নাই)। তিনি চার বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ফলে লাগানো আমনের চারা নিয়ে বড় চিন্তায় আছেন। শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দিয়েও মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে এবং চারা বিবর্ণ হয়ে পড়ছে।  

সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কৃষক এনামুল হক বলেন, ভরা বর্ষাতেও সেচ দিতে হচ্ছে আমনের ক্ষেতে। এতে বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে। পানি কম থাকায় সার ও কীটনাশক ছিটাতেও সমস্যা হচ্ছে। জমির পাশ দিয়ে বয়ে চলা তিস্তা সেচ ক্যানেলে ও নালা নর্দমায় পানি নেই। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকদের বলছি বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করলে চলবে না। প্রয়োজনের সময় জমিতে সেচের মাধ্যমে পানি দিয়ে সার, নিড়ানি দিতে হবে। তবে উৎপাদনে ব্যাঘাত হবে না।

নীলফামারীতে সেচ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ২৯৯টি গভীর নলকূপ, বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ ১৭ হাজার ৯১৭টি, ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপ ১১ হাজার ৩৯০টি ছাড়াও সোলার পাম্প ৯টি, এল এল পি সোলার ২টি ও বিদ্যুৎচালিত ৫০টি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।