ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৪
ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

ময়মনসিংহ: অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দেখা দিয়েছে। এতে জেলার তিন উপজেলার ২১ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত।

বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক।  

রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন এসব তথ‍্য নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি জানান, হালুয়াঘাটের পানিবন্দি এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে বতর্মানে নারী শিশুসহ দেড় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এতে দুর্গতদের জন্য তিন উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদের।

অপর একটি সূত্র জানায়, ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন প্রশাসন। এছাড়াও পানিবন্দি অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে।  

এছাড়াও ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবাজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।  

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় নিমজ্জিত ধান ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত সাত হাজার ৫০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত চার হাজার ২০০ হেক্টর ও সবজি ৬০ হেক্টর। হালুয়াঘাটে নিমজ্জিত ধান সাত হাজার ৬০০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত চার হাজার ১০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত তিন হাজার ৫০০ হেক্টর ও সবজি ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান তিন হাজার ৬৩০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত এক হাজার ৪৮০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত দুই হাজার ১৫০ হেক্টর ও সবজি ৬২ হেক্টর।

উপজেলার আমতৈল গ্রামের সিদ্দিক মিয়া বলেন, রাস্তাঘাটে পানি, ঘরে, রান্না ঘরে পানি। কোথায় কোনো শুকনা খাবার পেলাম না। তাই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।

স্থানীয় আবুল কাশেম বলেন, এমন বন্যা আগে কখনও দেখি নাই। ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছি, এমন পানি ছিল না। বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। গরু ছাগল নিয়ে বিপদে আছি। গরু পানির মধ্যে বাঁধা। আমরা খুব সমস্যায় আছি। চলাফেরা খুব সমস্যা, রাস্তায় বুক সমান পানি। ফসলের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। আমন ধান পানির নিচে। এবার আমন ধান পাবো, এমন আশা করা যায় না। অনেক শাকসবজি জমি তলিয়ে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাত হাজার ৮০ জন মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১৭ লাখ, ভেসে গেছে পাঁচ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ ও রেনোপোনা ভেসে গেছে ১৪৯ লাখ টাকার। মৎস্য খাতে মোট পাঁচ হাজার ৯৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।