নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি শীতবস্ত্র (কম্বল) ও টিসিবির তেল উদ্ধার করেছে মেম্বার ও জনসাধারণ।
রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের বিশ্রামাগারের একটি গোপন কক্ষ থেকে গরিবদের উদ্দেশে দেওয়া সরকারের ৮০টি কম্বল উদ্ধার করা হয়।
এর আগে সকালে পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ তুলে ধরেন মেম্বাররা। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরও একটি অভিযোগপত্র দাখিল করার কথাও জানান তারা।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া সরকার পতনের পর থেকেই নিয়মিত অফিস করে না। এতে করে সাধারণ জনগণ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সাধারণ জনগণের জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ নানা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর আগেও ৭-৮ মাস আগে চেয়ারম্যান কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবার নিয়ে বিদেশে চলে যান। এতে করেও সাধারণ জনগণ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সে সময় চেয়ারম্যানের অপরিবর্তিতে তার বড় ছেলে উপজেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম তুহিনের স্বাক্ষরে পরিচালনার কথাও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া চেয়ারম্যানের অন্যান্য অনিয়ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি সহকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর দাখিল করার কথাও অভিযোগে তুলে ধরা হয়। পরে সেখানে মেম্বার ও জনসাধারণ একত্রে পরিষদের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালানোর জন্য সেখানে দায়িত্বরত সচিব আফসার উদ্দিনের কাছ থেকে চাবি চান। পরে সচিব চাবি দিতে অস্বীকার করলে মেম্বার ও সেখানে থাকা সাধারণ জনগণ চেয়ারম্যানের বিশ্রামাগারের তালা ভেঙে একটি গোপন কক্ষ থেকে ৮০টি কম্বল ও ৪টি টিসিবির তেলের বোতল উদ্ধার করে।
পলাশতলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মামুন ভূইয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া অনুপস্থিত। এতে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জনগণ। আজ আমরা (ইউপি সদস্যরা) মিলে লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করবো। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জনসাধারণ ও মেম্বারদের উপস্থিতিতে আমরা পরিষদের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে সরকারি ৮০টি কম্বল ও টিসিবির ৪টি তেলের বোতল উদ্ধার করি। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি সব কিছু উপজেলা পরিষদে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আমরা সেটাই করবো।
৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার বলেন, চেয়ারম্যান আমাদেরকে কিছুই জানান না। সবকিছুই ওনার নিজ ইচ্ছা মতো করে থাকেন। আমাকে টিসিবি'র ৫০টি কার্ড দেওয়ার কথা সেখানে আমাকে ১১টি কার্ড দিয়েছেন। বাকি কার্ডগুলো তিনি ১০০০, ১২০০, ১৫০০ টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করেছেন। আর কম্বলের বিষয়টা আমি চেয়ারম্যানের নির্দেশে কিছু লোককে পরিষদে কম্বল নিতে পাঠিয়েছি। তখন তারা পরিষদে আসলে চেয়ারম্যান কম্বল শেষ হয়ে গেছে বলে জানান। সে সময় সে মানুষগুলো আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। আজ পরিষদ তল্লাশি করে ৮০টি কম্বল পাওয়া গেছে। আমার মনে হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যদি বিষয়টাতে নজর দিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ি তল্লাশি করে তাহলে হয়তো আরো অনেক কিছু বেরিয়ে আসতো। বিষয়টিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পলাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বলেন, এ বছরের মার্চ মাসের দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী প্রতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ১ বস্তা করে কম্বল দেন। তখন অনেকটা গরম পড়ে যাওয়ায় কম্বলগুলো বিতরণ করিনি। ভেবেছি এবারের শীতে বিতরণ করব। আর তেলের বিষয়টা আমি জানি না। কে বা কারা এটি করেছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান বলেন, একজন প্যানেল চেয়ারম্যান দাবি করে আমাকে কল দেয়। তখন আমি কল রিসিভ করলে তিনি আমাকে ১০০ বা তার কিছু বেশি কম্বল পাওয়ার কথা জানান। তখন আমি ওনাকে কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদে নিয়ে আসতে বলি। আমরা কম্বলগুলোর ব্যাপারে জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। তবে টিসিবির তেলের ব্যাপারে কিছু শুনিনি। তবে চেয়ারম্যান সাহেবের রুমে যেগুলো সাধারন মানুষের কাছে বিতরণ করার কথা সেগুলো বিতরণ না করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২৪
জেএইচ