বরগুনা: ধর্ষণচেষ্টা হলেই বার্তা পৌঁছে যাবে স্বজনদের কাছে- ধর্ষণ রোধে এমনই এক অভিনব ডিভাইস (জুতা) আবিষ্কার করেছে বরগুনার এভারগ্রিন হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইম।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী আবদুল্লাহ আল সাইম (নিনাত) সদর উপজেলার বরগুনা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হাবিবুল্লাহ কালামের ছেলে।
সাইমের এই জুতা ধর্ষণ চেষ্টাকালে ভিকটিমের স্বজনদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবে। জুতার মাঝে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন এক জিপিএস ট্র্যাকার এবং ২৫০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক গান যা হেনস্থার শিকার নারীকে রক্ষা করবে ধর্ষক বা শত্রুপক্ষের হাত থেকে।
শুধু জুতা নয়, সাইম তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আবিষ্কার করে, বিমান, ড্রোন, অন্ধ মানুষের জন্য চশমা, লঞ্চ, রাডারসহ অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
ছোটবেলা থেকেই কোনোকিছু তৈরি বা আবিষ্কারের দিকে ছিল তার প্রবল আগ্রহ। ধর্ষণ রোধে ওর এই আবিষ্কারটি রীতিমতো তাক লাগিয়েছে স্বজনদের।
সাইম (নিনাত) বলে, এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্লাস থ্রি থেকে। ইউটিউবে একটি ইলেকট্রিক হিটার বানানো দেখার পর থেকে এই পথচলা শুরু। ছোট ছোট বিভিন্ন মোটর, পাখা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতাম। শুরুতে মা-বাবা সাপোর্ট করতেন না। ধীরে ধীর বুঝতে পেরে তারা আমার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ক্লাস থ্রি থেকে বিভিন্ন জিনিস যেমন ফ্যান, জাহাজ, বিমান, ড্রোন, অন্ধ মানুষের জন্য চশমা, লঞ্চ, রাডারসহ অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করতাম। আস্তে আস্তে বড় হলাম অভিজ্ঞতা বাড়লো। অনলাইন থেকে জিনিসপত্র কিনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতাম তখন। যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম তখন হঠাৎ করে একদিন ড্রোন বানানোর চিন্তা আসে মাথায়। যদিও এর আগে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেছিলাম। ড্রোনের চিন্তা আসার পর অনলাইন থেকে google, youtube থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ধীরে ধীরে এগোতে থাকি। কাজ শুরু করে প্রথমবার ব্যর্থ হই। ড্রোন তৈরি করার সময় পর পর সাত বার ব্যর্থ হই। এরপর অষ্টমবারে প্রথমবারের মতো পুরোপুরি ড্রোন তৈরি করতে সফল হই। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্লেন, লঞ্চ, রাডার, ব্লাইন্ড সানগ্লাস, ভেকু, ফোন কল ফায়ার এলার্ম, গ্যাস লিকেজ এলার্ম। এরকম বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রজেক্ট আমি তৈরি করেছি।
বর্তমানে সবচেয়ে বড় যে প্রজেক্ট তা হলো- ধর্ষণ রোধ, ও জরুরি অবস্থায় নারীদের সহায়তার জন্য আমি একটি জুতো তৈরি করেছি।
জুতাটি হাঁটার সময় অটোমেটিক চার্জ হবে, এটাতে লাগানো আছে জিপিএস ট্র্যাকার এবং ২৫০ ভোল্টের ইলেকট্রিক শকগান। যখন একজন নারী হেনস্থার শিকার হন, বা তাকে টেনে হিঁচড়ে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। এ অবস্থায় তিনি সাহায্য যাওয়ার জন্য তার মোবাইল ফোনে কাউকে কল দিতে অথবা মেসেজ দিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন না। এজন্য আমার তৈরি করা জুতায় আমি একটি জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার করেছি, যার মাধ্যমে জরুরি অবস্থায় কোনো নারীর সহায়তার প্রয়োজন হলে জুতাটি সামনের দিকে একবার প্রেস করলে জিপি ট্র্যাকারে থাকা সেট করা নির্দিষ্ট একটি নাম্বারে (হতে পারে সেটি মা-বাবা ভাই-বোন অথবা নিকটতম কোনো আত্মীয়) একটি মেসেজ যাবে, দুইবার ক্লিক করলে সরাসরি একটি কল যাবে যার মাধ্যমে ওই ব্যক্তি বুঝতে পারবে আপনার সহায়তা প্রয়োজন এবং আপনার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। তিনি জিপি ট্র্যাকারের মাধ্যমে আপনার লাইভ লোকেশন দেখে সেখানে আসতে পারবেন এবং আপনাকে উদ্ধার করতে পারবেন। এবং ওই অবস্থায় তাৎক্ষণিক আত্মরক্ষার জন্য অন্য জুতোটি ব্যবহার করতে পারবেন। জুতায় লাগানো আছে ২৫০ কিলো ভোল্টের ইলেকট্রিক শক, এবং নিচে লাগানো হয়েছে পায়োজোইলেকট্রিক প্লেট যার মাধ্যমে যখন জুতাটি পড়ে হাঁটবে তখন অটোমেটিক চার্জ হয়ে যাবে।
সাইম আরও বলে, এ বিষয়ে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে, এই জুতাটি আমি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে পারব, এটিকে আমি সম্পূর্ণ পরিধানযোগ্য একটি জুতা তৈরি করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।
আবদুল্লাহ আল সাইম (নিনাত) এর বাবা হাবিবুল্লাহ কালাম বলেন, আমি একজন প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। আমার ছেলে ছোটবেলায় এসব বানানোর চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক সময় বিদ্যুতের শক খেয়েছে এবং আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করতে হয়েছে। তখন আমি রাগারাগি করতাম অযথা টাকাগুলো নষ্ট করার জন্য। এরপর থেকে অনেক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি তৈরি করে আমাদের অবাক করে দিয়েছে। এক সময় আমারও ভালোলাগা শুরু হলো ওর এসব প্রতিভা দেখে।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে আমার ছেলে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ও আরও ভালো কিছু করে দেখাবে এবং উপকূলীয় জেলা বরগুনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২৪
আরএ