ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

মেয়ের জন্য সরকারি চাকরি চাইলেন গোলকিপার রুপনার মা

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৪
মেয়ের জন্য সরকারি চাকরি চাইলেন গোলকিপার রুপনার মা

রাঙামাটি: মেয়ের জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে চাকরির আবেদন জানিয়েছেন নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমা।

তিনি বলেছেন, ‘সারা বছর ফুটবল খেলে জীবন চলবে না রুপনার।

। সে তো আর আগের মতো দুঃখ কষ্ট সহ্য করে কাজ করেও খেতে পারবে না। তাই বর্তমান সরকার যদি রুপনাকে একটি চাকরি দেয় তাহলে ভালো হবে। ’ 

নারী সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গর্বিত সদস্যের নাম বাঘিনী কন্যা রুপনা চাকমা। যিনি প্রতিপক্ষের মুহু মুহু আক্রমণ গোলজালে দাঁড়িয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারও। তার এমন অর্জনে পাহাড়ে বইছে আনন্দের জোয়ার।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম ভুইয়াদাম গ্রামে রুপনা চাকমার পরিবারের বসবাস। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে বয়ে যাওয়া শান্ত মাউরুম নদী। নদীর কোল ঘেঁষে দেশ সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমার বাড়ি। কম কথা বলা রুপনা চাকমাও সহযোদ্ধা ঋতুপর্ণা চাকমার মতো পিতৃহারা।  

ভিন্ন উপজেলায় বসবাস করলেও স্কুলে পড়ার সুবাদে ঋতু ও রুপনা দু’জনেই ভালো বন্ধু। তাদের কোচ একজনই। তবে  বাংলাদেশ দলে একজনের পজিশন স্ট্রাইকার অন্যজন গোলকিপার। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় পুরো দেশের আনন্দ পাহাড়ে বইছে। এতদূর আসতে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে রুপনা চাকমাকে।

গত ২০২২ সালে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হলে সরকার রুপনার চাকমার বাড়ি সেমিপাকা করে দেয়। মাউরুম নদী পার হয়ে রুপনাদের বাড়িতে যেতে হয় বলে সরকার নদীর দু’পারে সংযোগ সেতু করে দিচ্ছেন।  মেয়ের এমন সাফল্য গাঁথা এবং সরকারের এমন উপহার তার পরিবার কিছুটা খুশি হলেও তারা শঙ্কায় ভুগছেন। পরিবারের দাবি রুপনা খেলোয়াড়ি জীবন শেষে সরকারি চাকরি করলে তার জীবনের নিশ্চয়তা পাবে।

গোলকিপার রুপনার মা কালাসোনা চাকমা বলেন, মেয়ের এমন অর্জনে আমরা অনেক খুশি। তবে সরকারের কাছে মেয়ের জীবনের নিশ্চিতায় সরকারি চাকরি দাবি করছি।

রূপনার বড় ভাই শান্তি জীবন চাকমা বলছেন, বোনের বিজয়ে বেজায় খুশি। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি হয়েছে, এলাকার মানুষের জন্য সেতু হচ্ছে। তাদের চলাচলের জন্য সড়ক নির্মাণ করে দিলে তাদের চাওয়াটা পূর্ণ হবে।

রুপনার ভাবী সুশীলা চাকমা বলেন, রুপনার এমন অর্জনে পুরো পরিবার খুশি, এলাকাবাসীও তাকে নিয়ে গর্বিত। তবে রুপনাকে সরকারি চাকরি দিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

রুপনার স্থানীয় কোচ শান্তিমণি চাকমা বলেন, ঋতু, রুপনা আমাদের ছাত্রী। তাদের নিয়ে গর্বের শেষ নেই। পাহাড়ে উন্নত খেলোয়াড় তৈরি করতে সুযোগ, সুবিধা বাড়ানোর অনুরোধ জানাই।

ঘাগড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও রুপনা চাকমার স্কুল শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান বলেন, ফাইনাল খেলাটা দেখে আমার ছাত্রীদের জন্য গর্ববোধ করছি। তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরি করতে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ জানাই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে পাহাড় থেকে অনেক খেলোয়াড় উঠে আসলেও তাদের প্রতি যত্নের অভাবে হারিয়ে গেছে। ঋতু, রূপনা, মণিকা তাদের প্রতি সুনজর দিতে পারলে তারা আরও বাংলার গৌরব বয়ে আনতে পারবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।