ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ঋণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এসব প্রতিষ্ঠান সুদসহ অতিরিক্ত ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে সতর্ক হওয়ার তাগিদ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের।
তিনি বলছেন, এ ধরনের কনভেনশনাল প্রতিষ্ঠান তাদের বিজনেস মডেল পরিবর্তন করতে পারে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত পুরস্কার হিসাবে সুদসহ ঋণের পরিবর্তে প্রণোদনা দেওয়া।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নতুন বাংলাদেশ’: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর টিআইবি সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দেশে-বিদেশে সরকারের গুরুত্ব বেড়েছে। পাশাপাশি একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনে ছাত্ররা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা বিশ্ব দরকারে সমাদৃত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অনেক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা হবে, গবেষণা হবে।
তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সমর্থন দেওয়া উচিত। ভারতের উত্তরণ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানানো উচিত। উল্টো পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ভারত থেকে পতিত সরকারের ঘড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড – সর্বোপরি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সরকার ও দেশের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের পক্ষ থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার প্রশ্নে কোনো কোনো মহলের ধৈর্যের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তিন মাসেই সরকারের কার্যক্রম নিয়ে কোনো কোনো মহলের হতাশা তৈরি হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে দলবাজি, দখলবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি চলমান রয়ে গেছে। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও দলীয়করণের পরিবর্তে আরেকটি দলীয়করণের প্রতিস্থাপন বা হাতবদলের মতো ঘটনা ঘটছে। প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্দ্বন্দ্বও তৈরি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার রাষ্ট্র সংস্কার হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনড় অবস্থান ও রাজনৈতিক সহনশীলতার ঘাটতি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে অতিরিক্ত ক্ষমতায়ন এবং বিভাজনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা সংস্কারের লক্ষ্যপূরণকে ব্যাহত করতে পারে।
তিনি একসঙ্গে দেড় শতাধিক সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সমালোচনা করেন এবং বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একসঙ্গে এত সাংবাদিকের কার্ড বাতিল করা ভালো বার্তা দেয় না। গত ১৫ বছরে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ৪২ ধাপ পিছিয়েছে। পরিবর্তনের সরকারের জন্য এটি কাম্য নয়। কোন সাংবাদিক পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছে, প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা নেওয়া যেতে পারে, ঢালাওভাবে নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
জেডএ/আরএইচ