ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বোল্ড অ্যান্ড লাউড স্ট্যান্ডের জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ: হাসনাত

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
বোল্ড অ্যান্ড লাউড স্ট্যান্ডের জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ: হাসনাত

বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি বিবৃতি পোস্টকে কেন্দ্র করে দলটিকে  ধন্যবাদ জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার (১ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, ‘এমন বোল্ড অ্যান্ড লাউড স্ট্যান্ডের জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ। ’ পোস্টের মন্তব্যের অংশে বিএনপির সেই বিবৃতি শেয়ার করেছেন তিনি।

কি রয়েছে বিএনপির সেই বিবৃতিতে? 

আজ সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বিবৃতিটি পাঠ করে শুনিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।  

বিবৃতিতে বলা হয়েছে - ‘দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে কুখ্যাত গণতন্ত্রের ঘাতক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের স্বস্তি-শান্তির অভাবনীয় স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হয়েছে। দেশের চতুর্দিকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনায় জন উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। দেড় দশকের জগদ্দল পাথর অপসারণ হয়েছে মানুষের স্কন্ধ হতে। ’

‘জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যখন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তখন বাংলাদেশের দেড় দশকের সন্ত্রাসী মাফিয়ালীগের রক্তাক্ত তাণ্ডবে সুষুপ্তিতে থাকা ভারত সরকার সর্বস্ব হারানোর বেদনাবিদ্ধ অস্থিরতা আর অস্বস্তি বিস্ময়কর রকমের প্রকট হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার পতন হজম করতে পারছে না ভারত সরকার। শেখ হাসিনার পতনে তাদের অন্তরে ভয়ংকর অনল দহন। এর কারণ অতিমাত্রায় দাদাগিরি করার ফলে ভারতের সঙ্গে তার প্রত্যেক প্রতিবেশীর সম্পর্ক তলানিতে। শুধু হাসিনার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের ওপর। ভারত বাংলাদেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করতো। সেই আশ্রিত রাজ্য হাত ফসকে গেছে। ’

‘বিগত ১৫ বছর হাসিনাকে সামনে রেখে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত দখল করে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন বাংলাদেশকে আবার কীভাবে তাদের করতলে নেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যেই তারা নীলনকশা করছে। ভারতের সরকার মনে করে, বাংলাদেশকে অষ্টম সিস্টার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তাদের সেভেন সিস্টার্স নিরাপদ থাকবে। চাণক্য ভারতের বশংবদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ও পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই মোদি ও তার গদি মিডিয়া বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র এবং-অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তারা চরম হতাশা-আহাজারিতে নিমজ্জিত। তাদের আচরণ ক্রমশ স্পষ্টত অসুপ্রতিবেশীসুলভ, অস্বাভাবিক এবং একদেশদর্শী। একজন স্বৈরাচারের পতন নিয়ে কোনো দেশের এমন আহাজারি বিশ্বে বিরল। ভারতের কতিপয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বানোয়াট গল্প প্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠী ও হাসিনার যৌথ ইন্ধনে ভারতীয় কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী গণমাধ্যম এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। ’

‘বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান বয়ান মিথ্যার ধোঁয়াজাল দিয়ে ঘেরা। ভারত অন্তর্গত দিক থেকেই বাংলাদেশ বিদ্বেষী। এদের মধ্যে মানবিক নৈতিকতার ছিটেফোটাও নেই। এই কারণে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বাভাবিক বিকাশে বিশ্বাসী দেশের জনগণ ও জাতীয় নেতাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে। ’

‘আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, দুই/তিন দশকে পূর্বে এদেশের এক মহান জাতীয়তাবাদী নেতা ও স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি ফাইল ইনিশিয়েট করে। এর কিছুদিন পরে সরকার পরিবর্তিত হয়ে শ্রী মোরার্জী দেশাইয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তিনি ফাইলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। পরে আবার শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাসীন হলে ফাইলটির কার্যক্রম চালু হয়ে এবং এর কিছুদিন পরে ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ভারতেরই একটি পত্রিকা সানডেতে এর ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সাংবাদিক সুব্রামনিয়ম প্রতিবেদনটি রচনা করেন। সুতরাং আওয়ামী লীগ ব্যতিরেকে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই ভাল চোখে দেখে না। ’

বিবৃতিতের আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ঐতিহাসিক কাল ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রীতি ও শুভেচ্ছার বন্ধনে আবদ্ধ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের কোনো কারণের অভ্যুদয় হয়নি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হাইপার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার জন্য ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে দুঃশাসনের অবসান হওয়া, হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি তাদের মনে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে লাঞ্ছিত করতে, দুর্দশায় ফেলতে, অবমাননা করতে চলছে অতিকথন আর অপপ্রচারের বিরতিহীন ধারাভাষ্য। তথাপিও যাবতীয় ভয়, হুমকি ও দুর্বিপাকের মধ্যেও বাংলাদেশিরা মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্পে সকল চক্রান্তকে প্রতিহত করবে। ’

‘সচেতন বন্ধুরা, প্রতিদিন বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারত সরকার এবং উগ্রবাদী বিজেপির নেতারা বক্তব্য-বিবৃতি হুংকার এবং বায়বীয় অভিযোগ করেই চলেছে। কলকাতায় আমাদের উপ হাইকমিশনে উগ্রবাদী হিন্দুরা আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে ভারতীয় গোয়েন্দারা আওয়ামী লীগ ও বিশেষ একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে কীভাবে ব্যবহার করছে সেই পরিকল্পনার ছক প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের যে কোনো ভিত্তি নেই, তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকার করা একটি জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৪.১ শতাংশ মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বেশি নিরাপত্তা দিচ্ছে। এই জরিপ বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান করেনি। বিদেশি প্রতিষ্ঠান করেছে। ফলে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকার কোনো অবকাশ নেই। ’

‘বরং ভারতে কীভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন তোলা যায়। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমানরা নিপীড়ন-নির্যাতন, এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে। বাড়ী-ঘর-স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু মুসলমানই নয়, দেশটির খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও আক্রমণের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আসামে খ্রিস্টিয়ান ফোরাম বলেছে, আসামে কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ভারত সরকার তার প্রতিবাদ বা প্রতিকার করে না। মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের উপাসনালয় ধ্বংস করা হয়েছে। স্থানীয় ট্রাইবাল লিডার্স ফোরামের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫০টিরও বেশি গির্জা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।