ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় পরিবহন সেক্টরে আবার অস্থিরতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
বগুড়ায় পরিবহন সেক্টরে আবার অস্থিরতা

বগুড়া: বগুড়ায় পরিবহন সেক্টরে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অস্থিরতার নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাওয়া।

এনিয়ে যে কোনো সময় সহিংসতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাল্টা কমিটি ঘোষণা আর একে অপরের বিরুদ্ধে পত্রিকায় পাল্টা পাল্টি বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। এসব কারণে সাধারণ মালিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পরিবহন মালিকদের সংগঠন বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি। এ সংগঠনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রুটে গড়ে ৬৫০ বাস প্রতিদিন চলাচল করে। বিগত সময় আওয়ামী লীগের নেতারা সংগঠনটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ৬ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব জামায়াত পরিচালিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন বগুড়া শহর শাখার সহসভাপতি  ও সংগঠনের উপদেষ্টা এরশাদুল বারী এরশাদকে দেওয়া হয়। এরপরই সংগঠনের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ডিউক ও সাধারণ সস্পাদক আমিনুল ইসলাম আত্মগোপন করেন। তাদের অনুপস্থিতিতে সহসভাপতি ফজলুর রহমান তালুকদার ও এরশাদুল বারী এরশাদ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।  

গত ৩ ডিসেম্বর ফজলুর রহমান তালুকদার শহরের একটি অডিটোরিয়ামে বগুড়া বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি সাধারণ সভা ডাকেন। সভায় ফজলুর রহমান তালুকদার নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বাকীকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করেন। আর এরপর থেকেই দেখা দেয় অস্থিরতা। দায়িত্ব প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল বারী এরশাদ কমিটি ঘোষণাকে অবৈধ উল্লেখ করে পত্রিকায় প্রতিবাদ জানান।

এরশাদুল বারী এরশাদ বলেন, আব্দুল জলিল বাকী বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সদস্য না হয়েও নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছেন, যা অবৈধ।

এছাড়া রাজশাহী শ্রম দপ্তর থেকে অনুমোদন করা মনোগ্রাম অবৈধভাবে ব্যবহার করে নিজেকে বগুড়া বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা অবৈধ বলে দাবি করেন তিনি।  

অপরদিকে আব্দুল জলিল বাকী বলেন, আমার বাস রয়েছে এবং জয়পুরহাট ও রংপুর রুটে বাস চলাচল করে। সাধারণ সভায় উপস্থিত পরিবহন মালিকদের সম্মতিতে আমাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।

এদিকে সাধারণ বাস মালিকরা বলছেন, মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব নিয়ে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল মালিক সমিতির সাবেক নেতা ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম শাহীনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া মালিক সমিতি দখল করা নিয়ে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ অসংখ্য মানুষ আহত হন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বাস। এখন আবার মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব সেদিকে যাচ্ছে।  

তারা বলেন, বিগত সময় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। আর আবার পরিবহন মালিক সমিতি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।

বগুড়া বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, এ সংগঠনের মালিকদের ৮৫০টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে চলাচল করে ৬৫০টি বাস। বাসগুলো টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার আগেই চেইন চাঁদা হিসেবে আদায় করা হয় ১৫০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিদিন ৬৫০টি বাস থেকে ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। গত ৫ আগস্টের আগে চেইন চাঁদা আদায় করা হতো ২৫০ টাকা করে। যার ১৫০ টাকা সংগঠনে হিসেব থাকলেও ১০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন ৬৫ হাজার টাকা নেতাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হতো।

সাধারণ মালিকদের মধ্যে আরিফ বিল্লাহ অনিক ও আফজাল হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের আগে আমাদের বাস থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা চেইন চাঁদা নেওয়া হতো। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ১০০ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা চেইন চাঁদা নির্ধারণ করেছেন। ফলে প্রতিটি বাসের মালিকদের দিনে ১০০ টাকা হিসেবে মাসে ৩০০০ হাজার টাকা চাঁদা কম দিতে হচ্ছে। এতে করে মালিকরা উপকৃত হচ্ছেন।  

তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মালিক সমিতি নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যা যে কোনো সময় সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। ফলে সাধারণ মালিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির দায়িত্ব প্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল বারী এরশাদ বলেন, আগামী ফ্রেব্রুয়ারি মাসে সংগঠনের নির্বাচন। ডিসেম্বর মাসে সংগঠনের কার্যালয়ে সাধারণ সভা হওয়ার কথা। গত ১৬ নভেম্বর সহসভাপতি ফজলুর রহমান তালুকদারে সভাপতিত্বে নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ৩ ডিসেম্বর অন্য একটি স্থানে সভা করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যা অবৈধ। এরই মধ্যে রাজশাহী বিভাগীয় শ্রম দপ্তর থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে চিঠি দিয়ে ৩ ডিসেম্বর বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের বিষয়ে ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি মালিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর দিন থেকেই চেইন চাঁদার সঙ্গে অতিরিক্ত ১০০ টাকা চাঁদা আদায় বন্ধ করে দিয়েছি। মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে আদায় করা চাঁদা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে অনেকের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। একটি মহল বৈধ ১৫০ টাকা চেইন চাঁদা বন্ধের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য টার্মিনালের কর্মচারীদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। ফলে পরিবহন সেক্টরে আবার নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

তিনি বলেন, বিষয়টি সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ছাড়াও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, আমরা দুই পক্ষকেই ডেকে তাদের বক্তব্য শুনেছি। সহিংসতায় না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে অনুরোধ করেছি। সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে আমরাও কাজ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।