ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় 

কর্মজীবী মায়েদের জন্য জেলা পর্যায়ে হবে ডে-কেয়ার সেন্টার 

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
কর্মজীবী মায়েদের জন্য জেলা পর্যায়ে হবে ডে-কেয়ার সেন্টার  ডে-কেয়ার সেন্টার: ফাইল ফটো

ঢাকা: কর্মজীবী মায়েদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন জেলার ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে, যা কর্মজীবী মায়েদের তাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশ প্রদান করবে, যাতে তারা শান্তিপূর্ণ মনোবলে তাদের কর্মজীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

এ প্রকল্পটি আজ (২৩ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হতে পারে, যার প্রাক্কলিত বাজেট ২১১.৭১ কোটি টাকা। ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো ৪ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সুবিধা প্রদান করবে, যাতে তারা প্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অভ্যন্তরীণ খেলা এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি সেন্টারে ৫০ থেকে ৮০ জন শিশু থাকবে এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (Expanded Program on Immunization) আওতায় টিকাও প্রদান করা হবে। এ সেন্টারগুলো প্রতি বছর প্রায় ৩,০০০ শিশুকে সেবা প্রদান করবে, যা কর্মজীবী মায়েদের তাদের ক্যারিয়ারে মনোযোগ দিতে সহায়তা করবে, তাদের শিশুদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার বিষয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন হবে না। এ উদ্যোগটি ডে-কেয়ার সেবার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের উদ্দেশে বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মায়েদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী, এ নারীদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা জাতীয় উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে, তাদের সন্তানদের জন্য উপযুক্ত ডে-কেয়ার সেবা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে দেশে মাত্র ২০টি ডে-কেয়ার সেন্টার কার্যক্রম চালাচ্ছে, এবং কর্মজীবী নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, সরকারি ও বেসরকারি খাতে আরও অনেক সেন্টারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় চাহিদা পূরণের জন্য "৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার" প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। এ উদ্যোগটির লক্ষ্য কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা, যাতে তাদের সন্তানদের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি মা কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেন। এই প্রকল্পটি বিশেষভাবে গার্মেন্টস এবং কারখানার কর্মরত মায়েদের উপকারে আসবে, যাতে তারা আয় উপার্জনমূলক কাজে অংশ নিতে পারেন, তাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা না করেন।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য

প্রকল্পটির প্রধান লক্ষ্য হল কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ ডে-কেয়ার সেবা প্রদান করা, যাতে তারা তাদের কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে পারে এবং তাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এই ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো প্রধানত ৪ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের সেবা দেবে, এবং বিশেষভাবে গার্মেন্টস ও কারখানার কর্মরত নারীদের উপর ফোকাস থাকবে। এই উদ্যোগটি কর্মজীবী মায়েদেরকে তাদের শিশুদের নিরাপদ এবং সহায়ক পরিবেশে রেখে কাজ করতে সাহায্য করবে, যা তাদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

এই সেন্টারগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে কর্মক্ষেত্রে মায়েদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে, কারণ তারা কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে পারবেন কোনও ধরনের বিভ্রান্তি ছাড়া। এই প্রকল্পটি নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এবং জেন্ডার ইক্যুলিটি  ও অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম এবং পরিকল্পনা

এ প্রকল্পের অধীনে, ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠিত হবে, যা কর্মজীবী মায়েদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিবেশ সরবরাহ করবে। শিশুর খাবার, অফিস বিল্ডিং ভাড়া, ফার্নিচার, সরঞ্জাম এবং খেলাধুলার সামগ্রী সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীও সেন্টারগুলোতে প্রদান করা হবে। এই সম্পূর্ণ পদ্ধতি নিশ্চিত করবে যে সেন্টারগুলো শিশুদের জন্য উচ্চমানের সেবা প্রদান করতে সক্ষম।

প্রকল্পটি মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা বাস্তবায়ন করবে। ২১১.৭১ কোটি টাকার প্রাক্কলিত বাজেট সহ, এই প্রকল্পটি সরকারী তহবিল দিয়ে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এটি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে, এবং ৪৫টি জেলা, ১২টি সিটি কর্পোরেশন এবং ১৩টি উপজেলায় ৮টি বিভাগের মধ্যে সেবা প্রদান করবে।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব
  
এ প্রকল্পটি দেশের সমাজ-অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে, নারীদের সম্পূর্ণভাবে শ্রমবাজারে অংশগ্রহণে সহায়তা করবে। ডে-কেয়ার সেবা প্রদান করে, এই উদ্যোগ কর্মজীবী মায়েদেরকে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সাহায্য করবে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে। এটি জেন্ডার ইক্যুলিটি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, কারণ নারীদের কাজ এবং পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

বিস্তারিত সরকারী উদ্যোগ

এ ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোর প্রতিষ্ঠা দেশের শ্রমবাজারে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য সরকারের বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ। সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে চিলমারিতে নদী বন্দর নির্মাণ, কুমিলায় টেকসই কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং রাবার শিল্পের আধুনিকীকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রবৃদ্ধি সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।

প্রকল্পের সময়সীমা এবং বাস্তবায়ন

এ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে, এবং পুরো উদ্যোগটি সরকারি তহবিল দ্বারা সমর্থিত হবে। এটি ৮টি বিভাগ, ৪৫টি জেলা এবং ১২টি সিটি করপোরেশনকে কাভার করবে, এবং দেশের কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে-কেয়ার সেবা নিয়ে আসবে। প্রকল্পটি শিশুদের সুস্থতা এবং নিরাপত্তার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে, এবং কর্মজীবী নারীদের তাদের সন্তানদের সম্পর্কে চিন্তা না করে তাদের কর্মজীবনে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪
এসএমএকে/জেএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।