ঢাকা: সরকারি চিনিকলে লোকসানের পেছনে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক সমন্বয় কমিটি নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
কমিটির অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলো হলো- এএলআরডি, নিজেরা করি, ব্লাস্ট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রতিরোধ আন্দোলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।
নিজেরা করি-এর সমন্বয়কারী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী তবারক হোসাইন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, আইনজীবী রেজাউল করিম, গাইবান্ধা জজ কোর্টের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবু, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকে।
লিখিত বক্তব্যে শামসুল হুদা বলেন, দশকের পর দশক ধরে বিপুল পরিমাণ লোকসানের ভারে নুইয়ে পড়া ও বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ সংক্রান্ত একটি সরকারি সিদ্ধান্তের তথ্য সম্প্রতি আমরা জেনেছি। বর্তমানে দেশে সরকারি চিনিকলের সংখ্যা ১৫টি, যার মধ্যে তিনটি ব্রিটিশ আমলে, নয়টি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে এবং তিনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থাপিত হয়েছে। তবে এই ১৫টির মধ্যে চালু আছে নয়টি। বাকি ছয়টি আখের সংকট ও লোকসানের কারণ দেখিয়ে কয়েক বছর আগে বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে সরকারি চিনিকলগুলোর বিপুল এ লোকসানের মূল কারণ চিনিকল কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, পুরোনো যন্ত্রপাতি এবং সর্বোপরি নানা গোষ্ঠীর মিলিত লুণ্ঠন। সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর লুণ্ঠনের আংশিক চিত্র রাষ্ট্রীয় (সিএজি) অডিট রিপোর্টে দৃশ্যমান।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার কৃষি ও কৃষকদের কথা চিন্তা করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিকাশের জন্য চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সংস্কার করে এর জনকাঠামো ঢেলে সাজাবে, করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ ও লুণ্ঠনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ চিনিকলগুলো থেকে অর্থ লোপাটকারী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনবে। কিন্তু আমরা দেখলাম তা সম্পন্ন না করে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো করে বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকলগুলো চালুর ঘোষণা দিয়ে বিগত স্বৈরশাসকদের সুবিধাভোগী লুণ্ঠনকারীদের নতুনভাবে অর্থ লোপাটের আরও সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
শামসুল হুদা বলেন, আমরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে সরকারি চিনিকলগুলোতে লোকসানের পেছনের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য সরকারকে আহ্বান করছি। এই তদন্ত কমিশন খুঁজে বের করবে সরকারি চিনিকলগুলো কেন বছরের পর বছর এত বিপুল পরিমাণ লোকসান দিচ্ছে, কাদের কারসাজি, দুরভিসন্ধি ও স্বার্থ এই লোকসানের পেছনে ভূমিকা পালন করেছে, কাদের অবহেলা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি চিনিকলগুলোর এই বেহাল দশা হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে বন্ধ সব চিনিকল চালু করলেও আমাদের চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ পূরণ হবে, বাকি ৯৫ শতাংশ বাইরে থেকে আমদানিই করতে হবে। তাহলে মাত্র ৫ শতাংশ চাহিদা পূরণের জন্য বন্ধ চিনিকলগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে চালু করার কোনো মানে হয় না। বরং সেখানে অন্য কৃষিপণ্য চাষাবাদ করা যায়।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল আদিবাসীদের জমি দখল করে যে অলাভজনক চিনিকল বন্ধ রয়েছে, সেটি চালু না করে আদিবাসীদের তাদের ভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে। ওই জমি তিন ফসলি। এমন জমিতে কারখানা না করার নীতমালা রয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে, তাতে আমাদের আর এক ইঞ্চি জমিতেও কোনো কারখানা স্থাপন না করার আইন করতে হবে। সেসব জমিতে চাষাবাদ করতে হবে।
খুশী কবির বলেন, আমরা সার্বিক চিত্রটি দেখতে চাই, কোনটা বেশি জরুরি? চিনিকল নাকি অন্য কোনো ফসল। অনেক বছর ধরে চিনিকলগুলো অকার্যকর। সেগুলো জমি দখল করে রেখেছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি বিষয়টি দেখার জন্য। তবে এখনই আমরা কোনো আইনী পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
এসসি/আরএইচ