ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সরকারি খাল এখনও আ. লীগের দখলে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৫
সরকারি খাল এখনও আ. লীগের দখলে!

নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলার রাজবাড়ী ছোটচৌগ্রাম এলাকার প্রায় আড়াই কিলোমিটার সরকারি খাল দখলে রেখেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। এছাড়া বিএডিসির খালের নকশা অনুযায়ী খাল না খননেরও অভিযোগ রয়েছে।

 

বড়চৌগ্রাম রাজবারী খাল থেকে ছোটচৌগ্রাম পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দখল করা খালে সাত থেকে আটটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। এছাড়া টাকার বিনিময়ে খালের মুখ বন্ধ করে একাধিক পুকুর খনন করে খাল অকেজো করেছে প্রভাবশালী ওই মহল। ফলে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে কয়েকশ হেক্টর কৃষি জমি। এলাকার সাধারণ মানুষ ও কৃষকরা ওই খাল দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে চৌগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবু চন্দ্রার, তার ভাই আলাউদ্দিন, ইউপি সদস্য মোকাদ্দেস এবং আরেক ভাই বাচ্চু মিলে ছোটচৌগ্রাম ব্রিজের মুখ বন্ধ করে সাত বিঘা পুকুর খনন করেছেন। ব্রিজের পশ্চিম পাশে তারা খালের পুরো জায়গা দখল করে আরও একটি পুকুর খনন করেছেন। অথচ আগে খালের মাছ ধরে জেলে এবং মৎস্যজীবী পরিবারগুলো তিনবেলা মাছ, ভাত খেয়ে থাকতেন। এখন গুটি কয়েক মানুষের কারণে খাল দখল হয়ে আছে।  

অপরদিকে ছোটচৌগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বে অবস্থিত ব্রিজের মুখ বন্ধ করে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ ছয় বিঘা পুকুর খনন করেছেন, সাবেক ইউপি সদস্য জামাল পাঁচ বিঘা, সাবেক মৃত ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান জুয়েল পাঁচ বিঘা পুকুর খনন করেছেন। সেখানে লিজ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল মান্নান প্রামাণিক বলেন, প্রায় এক যুগ হলো দফায় দফায় খাল দখল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে বর্ষা মৌসুমে নৌকা চলাচল করতে পারে না, কৃষকদের আমন ধান ঘরে আনতে অনেক টাকা খরচ হয়। জলাবদ্ধতায় এসব এলাকায় চাষাবাদ কিংবা মাছ চাষও করতে পারেন না কৃষকরা।  

ওই গ্রামের আরেক কৃষক শরাফত শাহ বলেন, আগে নৌকায় সিংড়া যেতাম, এখন অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। এখন বর্ষা মৌসুমেও মাছ পাওয়া যায় না। শুকিয়ে যাওয়ার পর থেকে কচুরিপানায় ভরে গেছে, মশার উপদ্রব বেড়েছে। পুকুর খননের কারণে জমিতে আবাদও ঠিকঠাক হয় না, বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর মাছও পাওয়া যায় না।  

ভুক্তভোগী কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, খাল দখল হওয়ায় মাছ পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের লোকজন সরকারি বিএডিসির খাল দখল করে ইচ্ছেমতো পুকুর করে রেখেছেন। এ খাল দিয়ে এক সময় নৌকা বাইচ হতো। এখন সেই ঐতিহ্য আর নেই।  

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোকাদ্দেস আলী, বাবু চন্দ্রার, আলাউদ্দিন, ফারুক, জুয়েল, চাচ্চু জানান, যার যার মতো খাল দখল করে নিয়েছেন, কেউ কেউ খালের জায়গায় বাড়ি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। খাল দখলমুক্ত করলে সবার টাই করতে হবে, না করলে ঘরবাড়ি করবে এটাই স্বাভাবিক।  

স্থানীয় উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খালের অংশ দখল হয়ে গেছে শুনেছি। তবে স্থানীয়ভাবে কোনো আবেদন পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ভূমি অফিস।  

বিএডিসি সিংড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মানিক রতন বাংলানিউজকে জানান, ছোটচৌগ্রাম খালের কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে। বিষয়টি শুনেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে খাল খননের কোনো আবেদন দেননি এলাকাবাসী৷ আবেদন দিলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এবার খাল খননের বরাদ্দ কম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

এ বিষয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার  (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কেউ খাল দখল করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি সম্পদ দখলমুক্ত করা হবে। কোনো জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করা যাবে না। যারা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে উপজেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৫
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ