আনন্দ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ২১ বছর পেরিয়ে ২২ বছরে পদার্পন করলো দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিং মল বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং মল কমপ্লেক্সের লেভেল- ১ এর অ্যাট্রিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এই বসুন্ধরা সিটিতে আমি খুবই নস্টালজিক হয়ে যাই। শুরু থেকে এই মার্কেটে আমার পরিবার নিয়ে আসি। কেনাকাটা করি, খাওয়া দাওয়া করি। ২২ বছরে পদাপর্ণের অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে এভাবে মিলতে পেরে খুবই আনন্দ লেগেছে‘ লেভেল-১এর অ্যাট্রিয়াম থেকে বিভিন্ন তলার দর্শকের দিকে প্রীতম হাসান হাত উঁচিয়ে এ কথা বলেন।
মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ক্রেতার সমন্বয়ে নতুন বছরে চলার সূচনা হলো।
প্রীতমের বিখ্যাত গান ভেসে আসতে থাকে হাজার কণ্ঠ থেকে।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ এই শপিং মলের বর্ষ শুরুর আয়োজনটাও ছিল শ্রেষ্ঠত্বের চাদরে মোড়ানো। শপিং মলে ব্যবসা রত বিভিন্ন ব্র্যান্ড ফ্যাশন শো-য়ের মাধ্যমে স্ব স্ব পণ্যকে তুলে ধরার মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে তুলে। পণ্যের সঙ্গে পণ্যের ব্যবহার শৈলী ও উৎস দেশের সংস্কৃতি ঝংকৃত হয়। দিনভর অনেকগুলো পারফর্ম থাকলেও বিরক্ত না হয়ে সবাই মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছে।
ফ্ল্যাশ মব, ফ্যাশন ফেস্ট এবং কনসার্ট উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করেছে। অংশগ্রহণকারী ব্র্যান্ড ক্লাব হাউজ (KLUB HOUSE), ফ্রিল্যান্ড (FREELAND), বে (BAY), তুরাগ এ্যাকটিভ (TURAAG ACTIVE), ইরানী বোরকা বাজার (IRANI BORKA BAZAR) বর্ণাঢ্য পারফর্ম করে।
এ সকল অনুষ্ঠানের বিরতি শুরু হলে সবাই স্ব স্ব দোকান ফিরে যাচ্ছেন। নতুন ইভেন্ট শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন তলার মার্কেটের বেলকনিতে এসে হাজির হচ্ছেন। শপিং মলের অপূর্ব নির্মাণ শৈলীর কারণে লিফ্ট বেয়ে বা সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামা লাগেনি বা পারফর্ম শেষে ওপরে উঠা লাগেনি। দোকান থেকে কয়েক ধাপ এলেই নিচে লেভেল-১ অ্যাট্রিয়ামে চোখ রাখছে।
কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত তরুণ যুবার আধিক্য থাকার কারণে পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, উন্মাদনায় পরিণত হয়। আর সেই উচ্ছ্বাসের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় হালের জনপ্রিয় শিল্পী প্রীতম হাসান আর তার সহশিল্পী দেবশ্রী অন্তরা। প্রীতম হাসানের একেকটি জনপ্রিয় গানের তালে তালে মুগ্ধ করে ব্যবসায়ী, কর্মচারী, ক্রেতা নির্বিশেষে সব দর্শককে।
মার্কেটের নতুন বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে ক্রেতাদের মাঝে সাজ সাজ রব ছিল। শিশু, নারী, তরুণ-যুবা থেকে শুরু করে সব বয়সি ক্রেতা যেন আজ একটু বাড়তি সময় নিয়ে মার্কেটে এসেছে। কেনা কাটার পাশাপাশি বসুন্ধরার শপিং মলের আয়োজিত সব অনুষ্ঠানগুলো দেখবে।
চট্টগ্রামের ক্রেতা বোরহান উদ্দিন জানালেন, এখন ঢাকাতেই থাকেন। দুইদিন আগে জেনেছেন বসুন্ধরা সিটিতে অনুষ্ঠান আছে। সেজন্য বেলা ১১টা থেকেই মার্কেটে। ১২টার পর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখছেন। বোরহান উদ্দিন বলেন, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল বিখ্যাত মার্কেট হওয়ার পাশাপাশি একটি আধুনিক বিনোদনকেন্দ্র। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আরও সেজেছে নানা রঙয়ে। খুব ভাল লাগছে, কিছু কেনাকাটা আছে। সেগুলো করে বের হবো।
শিশু আসাদুল্লাহ গালিব মায়ের সঙ্গে এসে অনুষ্ঠান দেখছে। গালিব জানায়, ফ্যাশন শো হলো। কত রকম পোশাকের শো হলো, ভালই লাগলো। ফ্যাশন শোয়ে দেখানো একটি শার্ট কিনতে চাই।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ব্যবসায়ীরা চাঙ্গা। অন্য দিনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ক্রেতার উপস্থিতি ছিল। তারা জিনিষপত্র কেনার পাশাপাশি ঘুরে দেখেছে। নিশ্চই আমরা আনন্দিত। আগামীতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নতুন বর্ষে পদাপর্ণ উপলক্ষে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ এহসান রেজা ফিতা কেটে এই জমকালো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। তার আগে সকাল সাড়ে ১০টায় কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মধ্য দিয়ে বর্ষপূর্তির আয়োজন শুরু হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ এহসান রেজা বলেন, ২১ বছর অনেক লম্বা সময়। এই দীর্ঘ স্বপ্নযাত্রার আমরা ২১ বছর আজ পূর্তি পালন করছি। আমরা আজ শুধু প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছি না।
আজ থেকে ২৬ /২৭ বছর আগে বাংলাদেশে এরকম একটি বিশাল শপিং মলের স্বপ্ন দেখেছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের দোকান মালিক, ভাড়াটিয়া মালিক ও কর্মচারীরা। তাদের পরিশ্রমের ফলে আজকে এই মাইলস্টোন অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। এজন্য এই শপিং মলের দোকান মালিক, ভাড়াটিয়ামালিক ও কর্মচারীদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, বসুন্ধরা শপিং মলে প্রতিদিন প্রায় ২৫০০০ লোক পরিদর্শন করে। এটি পশ্চিমা নির্মাণ রীতিতে নির্মাণ করা বাংলাদেশে প্রথম বহুতল বাণিজ্যিক ভবন। ভবনটির প্রধান স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ ও মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ। ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
১৯৯৮ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মল তত্ত্বাবধানে আছে বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। এটি সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
জেডএ/আরএ