ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নিজ জমিতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে চান সীমান্তের কৃষকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
নিজ জমিতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে চান সীমান্তের কৃষকরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: বিনোদপুর ইউনিয়নের ক্যাপড়াটোলা গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন চৌকা সীমান্ত ঘেঁষা নিজ জমির ৫ বিঘায় আলু, ১ বিঘায় কপি আরও ১ বিঘায় টমেটো লাগিয়েছেন। শনিবারের ভারত ও বাংলাদেশিদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় কপি ও টমেটো অনেকটায় নষ্ট হয়ে গেছে।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সংঘর্ষের কারণে আলু তুলতে না পারলেও আজ (১৯ জানুয়ারি) সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আলু তুলছেন ২ শ্রমিক ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। বিজিবি’র পাহারায় মাঠে কাজ করলেও রয়েছে তার মনে উৎকণ্ঠা। তার ভাষ্য, কয়েকদিন পরপর এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে সরকারকে তা ক্ষতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আজ বিজিবি মাঠে আছে, কিন্তু আর একদিন যে আবারো সন্ত্রাসীরা আগ্রাসন চালাবে না এর নিশ্চয়তা কি? তার মত কৃষকের ফসল নষ্ট হলে সারাবছর কি করে চলবে। তার দাবি সীমান্তের এ অস্থিতিশীল পরিবেশ স্থায়ীভাবে বন্ধ হোক।

এ উৎকণ্ঠা শুধু জামালউদ্দিনের একার নয়। বিনোদপুর ইউনিয়নের প্রায় ৩শ বিঘা ফসলি জমির আড়াই’শ কৃষকের একই ভাষ্য। চৌকার মাঠের ৩শ বিঘা জমিতে রয়েছে ভুট্টা, রসুন, বরই, বাঁধাকপি, টমেটো, গম,মাসকালাই আলু পেঁয়াজ মটরসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসল ও সবজি। আর সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে আম ও বরই বাগান।

ইতিমধ্যেই এ মাঠে গত ৭ জানুয়ারি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি সীমান্তবাসী ও বহিরাগতদের পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রায় ১০ বিঘা জমির ফসল এবং শনিবারের ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশের জনসাধারণের পায়ে পিষ্ট হয়ে আরও প্রায় ২৫ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।  তাই সব কৃষকেরই দাবি এসব বন্ধ হোক। কৃষক শান্তিতে মাঠে কাজ করুক। কৃষকরা বলেন, ভুট্টা, রসুন, বরই, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে; আমরা যেন ফসল গুলো তুলতে পারি তার ব্যবস্থা যেন হয়, আর বারবার কিছুদিন পর পর এ অবস্থা যেন না হয়, এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এজন্য বিজিবির প্রতি অনুরোধ জানাই। আমরা ফসল না তুলতে পারলে সারা বছর খাব কী?

বিশ্বনাথপুর গ্রামের কাতলু জানান, পরিস্থিতি খারাপ থাকায় দেড় বিঘা জমির আলু কয়েকদিন ধরে তুলতে না পারলেও আজকে তুলতে পারছি বিজিবি’র পাহারায়। কিন্তু এ অবস্থার অবসান চান তিনি। সরিষা এবং হলুদ ও আলু তোলার পর সামনে ধান লাগাতে হবে তাই আর অস্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চাননা তিনি।

বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, জনগণ ও বিজিবির প্রচেষ্টায় সীমান্ত পরিবেশ এখন পুরোপুরি শান্ত। তবে সীমান্তে এ সংঘর্ষের জন্য উভয় দেশের কিছু দুষ্ট লোক দায়ী। তার দাবি সম্প্রতি গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের দুষ্ট লোকেরা ভারতে এবং ভারতের দুষ্ট লোকেরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ফসলের ক্ষতি করে সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে। আর এর সমাধানে ভারত সরকারকে বোঝানোর পাশাপাশি আমাদের দেশের সীমান্তবাসীকেও সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মেহেদী বলেন, সীমান্তে যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে তাদের উভয় দেশকেই দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। আর উৎসুক জনতা যারা ফোন নিয়ে টিকটক করতে গিয়ে গরিব কৃষকদের ফসল নষ্ট করছে তাদেরও কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯,২০২৫

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।