ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ মাঘ ১৪৩১, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মৌলভীবাজারে পানির অভাবে বোরোর আবাদ ব্যাহত

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
মৌলভীবাজারে পানির অভাবে বোরোর আবাদ ব্যাহত শুকিয়ে গেছে ছড়া

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে বোরো ধানের চাষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীজতলা।

নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানানোর পরও কাঞ্জার হাওর এলাকায় একাধিক ক্রস বাঁধ অপসারণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কৃষিবান্ধব জলাধার কুদালি ছড়াসহ অন্যান্য ছড়ার অবস্থা করুণ। ছড়াগুলো দুই পাশে পানির অভাবে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকের মাঝে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ও নাজিরাবাদ ইউনিয়নের কম বেশি ৫০ গ্রামের মানুষ পানি সংকটে বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ফাটাবিল থেকে বয়ে যাওয়া কুদালি ছড়ার দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৭ কিলোমিটার। ছড়ার উজানে কাঞ্জার হাওর এলাকায় কৃষকদের দেওয়া একাধিক ক্রস বাঁধ নির্মাণের কারণে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা পানি পাচ্ছেন না।

এতে করে ক্রসবাঁধের নিম্নাঞ্চলের কুদালি ছড়ার দুই পাশের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চাষ দেওয়া জমি পানির অভাবে ফেটে শক্ত হয়ে যাওয়ায় জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না অনেক কৃষক। অনেক স্থানে বীজতলায় চারার বয়স বেড়ে নষ্ট হচ্ছে।

গিয়াসনগর ইউনিয়নের গ্রাম নোয়াগাঁও, করিমনগর, সুনগইর, মাড়কোনা, সিকরাইল, আক্তাভাড়া, ভুজবল, রাধাকান্তপুর, গোমড়া, নিতেশ্বর ও ফাজিলপুর; মোস্তফাপুর ইউনিয়নের আজমেরু, গয়ঘড়, জগন্নাথপুর এলাকার একাংশসহ অন্তত ৫০ গ্রামে সেচ সঙ্কটের কারণে বোরো চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। তবে এসব এলাকার কিছু কিছু স্থানে কোনো কোনো কৃষক নিজস্ব গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের সেচ চাহিদা কিছুটা পূরণ করতে পারলেও বেশির ভাগ কৃষকের পক্ষে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

সদর এলাকার কৃষক আবজাল মিয়া জানান, তিনি চলতি বোরো মৌসুমে ১০০ বিগা চাষাবাদের জন্য বীজতলায় চারা তৈরি করেছেন। পানির অভাবে মাত্র ৩০ বিঘা চারা রোপণ করতে পেরেছেন। নিজ জমি থেকে ৪০০ গজ দূরে একটি ফিশারির মালিকের সঙ্গে পানির বিষয়ে কথা চলছে। পানি পেলে আরও ৩০ বিঘা জমিতে চারা লাগাতেন পারবেন। বাকি ৪০ বিঘা জমি অনাবাদী থাকবে।

কৃষক আরাফাত মিয়া জানান, গত বছর প্রায় ২৫০ বিঘা জমি কুদালি ছড়ার পানি দিয়ে চাষ করেন। এ বছর তার জমি ভেজানোর জন্য কোনো পানি ওঠাতে পারেননি। বীজতলায় চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বছর পুরো ২৫০ বিঘা জমি অনাবাদী থাকবে।

বর্গাচাষি একলিম মিয়া, সোনাচান দাশ, আলিম মিয়া, নিতাই দেবনাথ ও সুজন মিয়া জানান, প্রথমে জমিতে পাম্প মেশিন দিয়ে পানি উঠিয়ে একটি চাষ দেন। বর্তমানে পানি না পাওয়ায় জমি শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, উজানে ক্রস বাঁধ অপসারণের বিষয়ে গত ১৩ জানুয়ারি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দিয়েছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের অনেকেই বোরো আবাদ করতে পারছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামসুদ্দিন আহমদ জানান, চলতি বছর ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪১ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে রোপণ কাজ শেষে হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা পানি না পাওয়ায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তারা লিখিত জানিয়েছেন। পানির সমস্যা সমাধান না হওয়ায় এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ প্রশাসনকে জানিয়েছে। পৃথকভাবে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় বিষটি উত্থাপন করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, কুদালি ছড়ার দুই পাশে বোরো আবাদে স্থায়ী সমাধানে মনু ব্যারেজ থেকে পানি দেওয়ার বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি পাহাড়ি ছড়া কুদালি ছড়ার সাথে মিলিত হয়েছে এবং পানির উৎস না থাকায় কৃষকদের সমস্যা হচ্ছে। ক্রস বাঁধ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সমধানের চেষ্টা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
বিবিবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।