ঢাকা, বুধবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ১২ মার্চ ২০২৫, ১১ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাড়িতে সুনসান নীরবতা

জয়ন্ত জোয়ার্দ্দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৫
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাড়িতে সুনসান নীরবতা মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাড়িতে এখন এভাবেই তালা মারা দেখতে পাওয়া যায়

মাগুরা: মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের শিশুটি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। অন্যদিকে তার বাড়িতে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা।

যা মৃত্যুর শোককেও ছাপিয়ে গেছে। পিতা সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তার চাচার বাড়িতে।

শিশুটির বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায়। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যার কিছু আগে তাদের বাড়িতে যেয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরগুলোতে তখন তারা ঝুলছিল। পরিস্থিতি এমন ছিল যেন এক মৃত্যুপূরিতে প্রবেশ করা হয়েছে।
 
সাংবাদিক এসেছেন শুনে ছুটে আসেন শিশুটির পিতা। এই প্রতিনিধিকে দেখে তিনি যেন একটু সম্বিৎ ফিরে পান।

কথা বলা শুরু করলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মানুষটি। বলেন, ‘আমার মনিরে যারা ওই রকম অসুবিধা করেছে আমি তাগের...’। অনেকক্ষণ দম নিয়ে আবার বলেন, ‘দ্রুত ফাঁসি চাই’। তারপর আবার নীরবতা তার চোখমুখে। যেন বুক ভাঙা এক কান্নার আকুতি। কাঁদতে পারছেন না তাই একবার বুক চাপড়াচ্ছেন, একবার মাথায় হাত দিয়ে হা হুতাস করছেন।

কথা হয় পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুটির চাচির সাথেও। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন আগে শিশুটির বড়বোন বাবার বাড়িতে এসে জানান যে তিনি আর শ^শুর বাড়িতে যেতে চাননা। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন তার শ^শুর হিটু শেখ তাকে বিভিন্ন সময় জড়িয়ে ধরে। ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। সে শ^শুরবাড়িতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।

চাচি বলেন, ‘আমরা তখন মেয়েটির কথায় বিশ^াস করতে পারিনি। একজন শ^শুর মানে আব্বা। সে কি করে নিজের মেয়েকে (বৌমা) এভাবে খারাপ কাজ করতে পারে! সে কারণে আমরা তাকে বুঝাই সে যেনো শ^শুরবাড়ি ফিরে যায়’।

কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই রাজি না হওয়াতে আমরা ওর ছোটবোনকে ওর সাথে পাঠাই আর বলি ছোট বোন তোরে রক্ষা করবে-বলেন চাচি।

তিনি বলেন, ‘কীভাবে বুঝবো যাকে গার্ড (নিরাপত্তা) দেওয়ার জন্যি পাঠাইলাম সেই ওই পশুরের (বড় মেয়ের শ^শুর) কুনজরে পড়ে যাবে। আমরা এর বিচার চাই। উপযুক্ত বিচার চাই। ওই জানোয়ারেরা কোনোভাবেই যেনো পার না পায় আপনারা সেডা দেখবেন’।

সাংবাদিক এসেছেন শুনে আশপাশ থেকে আরও কিছু মানুষ জড়ো হন শিশুটির বাড়িতে। তাদের কয়েকজনের সাথেও কথা হয় এই প্রতিনিধির। তারা কিছুতেই এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। সবার মুখে শুধু একটিই প্রশ্ন, আট বছর বয়সী একটি শিশুকে কীভাবে বাপের মতো তালই (বোনের শ^শুর) ধর্ষণ করতে পারে।

এলাকাবাসী জানান, শিশুটির পিতাসহ পরিবারের সদস্যরা একবারে ভেঙে পড়েছেন। তারা নিজেদেরকে খুব একটা নিরাপদও মনে করছেন না। তারওপর শিশু সন্তানের জীবনের শংকা, পরিবারটি অস্থির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পিতার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। মাঝেমধ্যে তিনি বিলাপ করতে থাকেন মেয়ের জন্য।

এলাকাবাসীও অবিলম্বে শিশু ধর্ষণের বিচার দাবি করেন।

গত বুধবার (০৫ মার্চ) রাতে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছর বয়সী ওই শিশু। ধর্ষক তাকে হত্যারও চেষ্টা চালায়। বর্তমানে শিশুটি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ১২ মার্চ ২০২৫
এসএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।