ঢাকা: পণ্যের মূল্য কিছুটা বাড়লেও যদি টাকার ক্রয়ক্ষমতা স্থিতিশীল রাখা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের সংসার খরচে বড় ধরনের চাপ পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
তিনি বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমছে এবং টাকার ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। তবে সরকার চায় না সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়ুক।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি বা সামষ্টিক অর্থনীতির যে অবস্থা, তার সমন্বিত রূপ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। আপনারা দেখেছেন, ক্রমান্বয়ে আমাদের মূল্যস্ফীতি কমছে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আগামী জুন-জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ দেখতে পাচ্ছেন। সুতরাং, আমাদের টাকার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যে সামগ্রিক ব্যবস্থার উন্নতি, এটা একা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। এটা সামগ্রিকভাবে অর্থ, বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সর্বোপরি, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মেনে আমরা যেসব কাজ করার চেষ্টা করছি, সেটাই এই অগ্রগতির মূল।
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কম থাকলেও এখন আবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ, ডিম ও সর্বশেষ তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়ালেন এটার একটা চাপ তো সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে৷ এই চাপ কমাতে সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার দুই হাজার কোটি টাকা শুধু তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য ভর্তুকি দিয়েছে। আমাদের কাছে তথ্যের কোনো গরমিল নেই। ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছি, ভোক্তা অধিকারকে কাজে লাগিয়ে আমরা বাজারের শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেছি। সেখানে বহুলাংশে সফল হয়েছি, হয়তো কিছু অংশে ব্যর্থতা রয়েছে।
তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি আর তেলের দাম ১৪ টাকা বাড়া এক জিনিস নয়। মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে টাকার ক্রয়ক্ষমতার একটি সামগ্রিক প্রতিফলন। তেলের দাম ১৪ টাকা বেড়েছে—সেটা বাড়াতে আমরা বাধ্য হয়েছি। সরকারের যে নিজস্ব পরিচালন ব্যয় রয়েছে, সেই অর্থ তো তুলতেই হবে। না হলে রাষ্ট্রের ওপর দায় তৈরি হবে। সরকারকে তখন ঋণ করে সেই দায় পরিশোধ করতে হবে। আর সেই ঋণের বোঝা শেষ পর্যন্ত আমাদেরই বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন তেল আমদানিতে যে রেয়াত সুবিধা দেওয়া হতো সেটা গত ৩০ মার্চ শেষ হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ১৪ দিন সময় নিয়েছি। কারণ সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমাদের যে ফরমুলা আছে সেখান থেকে আমরা ৯ টাকা দাম কম নির্ধারণ করেছি। এজন্য আমরা আরও প্রতিযোগিতা ও তেলের স্থানীয়করণের চেষ্টা করছি। দীর্ঘ মেয়াদে তেলের বাজার স্থিতিশীল ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার চেষ্টা করছি। আমরা তেল না এনে তেলবীজ আনার চেষ্টা করছি যাতে ক্রয়মূল্য আরও কমে৷ প্রতি মাসে আমাদের প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়। সরকারের পক্ষে এটা আর টানা সম্ভব হচ্ছে না। ফলেও এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আশা করছি সামনে তেলের দাম স্থিতিশীল হবে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দামের ক্ষেত্রে সঠিক বলেছেন যে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, গত চার পাঁচ দিনে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। যদিও পেঁয়াজের এখন মৌসুম। কিছু পেঁয়াজ মজুদ হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আজকে ডেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করবো। অন্যান্য জিনিস যেমন মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বলেন সেটা বেড়েছে বলে আমার মনে হয় না। ১২০ টাকা ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে। চিনির দাম কমছে, সামনে আরও কমবে। আমরা সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি যদি বা টাকার ক্রয় ক্ষমতা যদি এক রকম রাখতে পারি। তাহলে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পেলেও আমার ধারণা একটা সংসারে খরচে চাপ ততটা পড়বে না যতটা ১৪ টাকা দেখে মনে হয়। তবে চাপ পড়বে। আমরা চাই না চাপটা না পরুক। আমরা আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টার মধ্যে এটা রেখেছি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা যারা কাজ করছি আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের যে দায় ফ্যাসিস্ট রেখে যায়। আপনারা জেনে খুশি হবেন আমরা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপরে রাষ্ট্রীয় দায় বা বৈদেশিক দায় পরিশোধ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৫
জিসিজি/এসআইএস