ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৪, মে ১৮, ২০২৫
একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন: কাঠামোগত সংস্কার’ শীর্ষক সংলাপ | ছবি: শাকিল আহমেদ

বর্তমানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সেগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

নানা কারণে বহু বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে না ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তবে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চায় এসব নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। তাই ছাত্র সংসদ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ক্যালেন্ডারে নির্বাচনের তারিখ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার সমস্যাকে বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। এ নিয়ে একটি নীতি সংক্ষেপও প্রকাশ করেছে বেসরকারি এই সংস্থা। সেই নীতি সংক্ষেপে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা ও প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।

রোববার (১৮ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন: কাঠামোগত সংস্কার’ শীর্ষক সংলাপে এই নীতি সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এফসিডিও-এর সহায়তায় এই সংলাপের আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র ডিরেক্টর লিপিকা বিশ্বাসের সঞ্চালনায় সংলাপে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির চিফ অব পার্টি ক্যাথেরিন সিসিল। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্বববদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সায়মা হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হুদা সাকিব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মালিক আকরাম হোসেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মেহরারুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য মেহেদি হাসানসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

সংলাপে নীতি সংক্ষেপটি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি চলতি বছরের মার্চ মাসে সম্পন্ন করা হয়। যেখানে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সংখ্যালঘু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন থেকে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য করার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল দরকার। শিক্ষার্থী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। নির্বাচন প্রয়োজন আছে, তার আগে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা দরকার।

গবেষণার ফলাফল প্রসঙ্গে কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন অবশ্যই প্রয়োজন। আর ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন প্রয়োজন আছে। ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন ৩-৬ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন সম্ভব।

জাতীয় রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ হলো—জাতীয় রাজনীতির প্রভাবে ক্যাম্পাসের পরিবেশে অস্থিরতা, প্রশাসনিক পর্যায়ের নিষ্ক্রিয়তা, আইনি কাঠামোর অস্পষ্টতা এবং দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য। যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংসদ নির্বাচনে নিরুৎসাহিত করে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের তারিখ একাডেমিক ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। যাতে তাদের শিক্ষাকার্যক্রমের সঙ্গে কোনো সংঘাত না ঘটে। এ ছাড়া শিক্ষকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা রাখবেন। ছাত্র সংসদ-সংক্রান্ত সংগঠনগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, যাতে সকল স্তরের ছাত্রছাত্রী—বিশেষত নারী, সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা সমানভাবে অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়।

সংলাপে ঢাকা বিশ্বববদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সায়মা হক বলেন, প্রশাসনিকভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে চাইলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দরকার আছে। তাহলে আলোচনার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়। এই নির্বাচন আয়োজন সময়সাপেক্ষ; এতে সকল অংশীজনের মতামত জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য মেহেদি হাসান বলেন, ডাকসুকে কেন্দ্রীয় রাজনীতির বাইরে আনা উচিত কি না, সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে। এখানে সব ধরনের রাজনৈতিক দল অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পালন করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন সময় ডাকসু নির্বাচনের কথা বলেছিলাম। ভেবেছিলাম ৫ আগস্টের পরে আমরা নির্বাচন পাব। সবাই সেটা প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে সেটি হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ডাকসু নির্বাচন হবে কি না, সেটি নিয়ে আমরা এখন সন্দিহান। তাদের কাছে আমাদের আর প্রত্যাশা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো দলীয়ভাবে চলে জানিয়ে উমামা ফাতেমা আরও বলেন, যার ফলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দলীয় কাঠামোর বাইরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদের রাজনীতির কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে গেছে। নিজেদের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার ভয়ে তারা নির্বাচন দিতে চায় না। তারা সরাসরি নির্বাচন দেবে না, বলে না। কিন্তু নানা জটিলতা দেখিয়ে সেটি আটকে রাখে। একাডেমিক ক্যারেন্ডারে নির্বাচনের তারিখ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দেওয়া যাবে।

এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।