বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জনঅসন্তোষ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী—সব পক্ষের চাপের মুখে রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন।
আমলাদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- বাংলাদেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাড়তে থাকা অসন্তোষের মধ্যে সোমবার(২৬ মে) সরকারি কর্মীদের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
নির্বাচন দেওয়ার আগেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার— সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল এবং সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন দিক থেকে চাপের মুখে রয়েছে এবং নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে গত রবিবার(২৫ মে) সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যার মাধ্যমে কোনো সরকারি কর্মচারীকে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই অসদাচরণের দায়ে বরখাস্ত করার ক্ষমতা জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে দেওয়া হয়। এতে গোটা আমলাতন্ত্রে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা এ অধ্যাদেশকে ‘দমনমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানায়। সরকারি কর্মচারীরা সোমবারও টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন।
এদিকে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষকও সোমবার (২৬ মে) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যান, তারা বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আমলাদের আন্দোলনে যোগ দেন।
এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার রবিবার এনবিআর ভেঙে দুইটি বিভাগে পরিণত করার আদেশ বাতিল করতে বাধ্য হয়। এর ফলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়ে গত সপ্তাহে, যখন একজন শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতা জানান— রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত সমঝোতা না হলে ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে ইউনূসের মন্ত্রিসভার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পরে জানান, ড. ইউনূস পদত্যাগ করছেন না।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাচ্ছি না। সপ্তাহান্তে এক বক্তব্যে মাহমুদ বলেন, ইউনূস পরিস্থিতির প্রতিবন্ধকতা স্বীকার করলেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ছাত্র আন্দোলনের জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস (৮৪) গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রথমিক ভাবে তার ক্ষমতা গ্রহণে ছাত্র আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই সহযোগিতা মূলক মনোভাব দেখালেও সময়ের সাথে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে শুরু করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার এখন একদিকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন এবং অন্যদিকে কাঠামোগত সংস্কারের চাপে পড়েছে। ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে হতে পারে। অপরদিকে, বিএনপি চায় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরেই হোক।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক ভাষণে ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন, যা সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
ড. ইউনূস শনিবার(২৪ মে) তার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন এবং সপ্তাহান্তে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিসহ দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
পরে প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এক যুদ্ধাবস্থার মধ্যে আছি। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আমাদের অস্থিতিশীল করতে নানা ধরনের চেষ্টা চলছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এ মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে, ফলে দলটি পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
এমএম