ঢাকা: মাদক ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন রাজা নকভির সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
সাক্ষাৎকালে দুদেশের মধ্যে মাদক ও সন্ত্রাস দমন, পুলিশ প্রশিক্ষণে দুদেশের পুলিশ একাডেমির পারস্পরিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সাইবার ক্রাইম দমন, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশীদার। দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিনদিন শক্তিশালী হচ্ছে। এ সময় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, দুদেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান। সেখানে আপাতত এমআরপি পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। দূতাবাসের ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হলে সেখানে ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশেরও অন্যতম প্রধান সমস্যা মাদক যা আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে সাধারণত পাচার হয়ে থাকে। তিনি বলেন, মাদক সমস্যা দূরীকরণে দুদেশ পারস্পরিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে।
সন্ত্রাসবাদ দমনে পাকিস্তান সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। সেখানে আমরা ব্যর্থ হলে তা পাকিস্তানসহ সবার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে। পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাদক যা পার্শ্ববর্তী দেশ আফগানিস্তান থেকে পাচারের মাধ্যমে আসছে।
পুলিশ প্রশিক্ষণে দুদেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে উল্লেখ করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে দুদেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একমত পোষণ করে বলেন, বাংলাদেশের সারদা পুলিশ একাডেমি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুলিশ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের নাগরিকত্ব দিচ্ছি না। তবে পাসপোর্ট দিচ্ছি যা ভিন্ন কোড বা সিরিয়াল নম্বরের যাতে তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা যায়।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা মানবতার খাতিরে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি যা আমাদের মতো দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় তিনি উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এর আগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রাজা নকভিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পাকিস্তান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মুহাম্মদ ওয়াসিফ প্রমুখ।
জিসিজি/আরআইএস