ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ আশ্বিন ১৪৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

শ্রীমঙ্গলে ট্রেনের পর্যাপ্ত টিকিট নেই, ভোগান্তি পর্যটকদের

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫৩, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
শ্রীমঙ্গলে ট্রেনের পর্যাপ্ত টিকিট নেই, ভোগান্তি পর্যটকদের শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টার। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন শ্রীমঙ্গল। নানা দিক থেকে শ্রীমঙ্গল দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা।

 এখানে দিন দিন বেড়েই চলেছে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা। কিন্তু ট্রেনের সীমিত আসন ও টিকিট সংকট পর্যটকসহ স্থানীয় যাত্রীদের ভ্রমণকে ব্যাহত করছে।  

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকাগামী চারটি এবং চট্টগ্রামগামী দুটি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে- ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস।

যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনগুলো নিয়মিত চললেও বগির সংখ্যা চাহিদার তুলনায় কম। প্রায় সব টিকিট অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে কাটতে হয় এবং যাত্রার ১০ দিন আগে সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে বিক্রি শুরু হলেও প্রথম দিন শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যেই সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। ফলে সাধারণ শ্রেণিতে ভ্রমণকারী যাত্রীদের ট্রেনের ভেতরে ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত করতে হয়। সীমিত আসন বরাদ্দ, কালোবাজারি ও বিকল্প সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থা পর্যটকদের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় নিয়মিত আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কাটেন সুমন দাস। একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রেনে যাত্রার ঠিক ১০ দিন আগে সকাল ৮টায় ওই ট্রেনের টিকিটগুলো যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে সোয়া ৮টার মধ্যেই ৯০ ভাগ টিকিট কেটে নেওয়া হয়। আর এর বেশিরভাগই কাটেন যারা ব্ল্যাকে (অবৈধভাবে) টিকেট বিক্রি করেন তারা।

শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটক আবু বকর সিদ্দিক জানান, টিকিট না পেয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে বাসে যাতায়াত করছেন। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সায়মা ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টার পরও ট্রেনের টিকিট পাইনি। শিশু সন্তান নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রা করতে হয়েছে। এটি খুবই কষ্টদায়ক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা রেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

ইকোট্যুর গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, শ্রীমঙ্গল দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হলেও ট্রেনের বগি ও আসন কম হওয়ায় পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এই শিল্পের উন্নতি করতে গেলে ট্রেনের পর্যাপ্ত টিকেটের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।  

শ্রীমঙ্গলের আরেক ব্যবসায়ী আবুল কাসেম বলেন, এই সমস্যা আজকের নয়, অনেক দিনের। আমরা বারবার অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু শ্রীমঙ্গলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের বিপরীতে রেল খাতকে সবসময়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। টিকিটের চাহিদা থাকলেও যথাযথ সেবা মিলছে না। অথচ এখানে রেলের সম্ভাবনা অনেক। দ্রুত বগি বাড়ানো না হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। তাই আমরা চাই, মৌলভীবাজারের যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।  

রেলওয়ের এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে- মন্তব্য করেন ব্যবসায়ী গোপাল দেবনাথ। তিনি নিয়মিত ঢাকা-শ্রীমঙ্গল আসা যাওয়া করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা যাত্রী হিসেবে অভিভাবকহীন অবস্থায় আছি। একের পর এক সংকটে পড়ে দিন পার করছি। কবে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটক বগি সংযোজন, আসন বরাদ্দ বাড়ানো, ডিজিটাল টিকিটিংয়ে স্বচ্ছতা ও কালোবাজারি দমন করলে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন খাত আরও উন্নত হবে।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, ঢাকাগামী  শ্রীমঙ্গল থেকে বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা কালনী এক্সপ্রেসে ৮১টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ৭০টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ১০৫টি, উপবন এক্সপ্রেসে ৬৫টি, পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে ৪৭টি এবং উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩০টি।  

তিনি বলেন, এসব ট্রেনে টিকিটের চাহিদা প্রচুর, কিন্তু বগির স্বল্পতার কারণে আমরা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। অ্যাপের মাধ্যমে যে টিকিট বরাদ্দ রয়েছে, তার তুলনায় অনেক বেশি চাহিদা। আমাদের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে টিকিটের চাহিদার কথা অবহিত করা হয়েছে।  

বিবিবি/আরএইচ     

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।