ঢাকা, বুধবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন চায় না: প্রধান উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৫, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫
কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন চায় না: প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি কেরি কেনেডির নেতৃত্বে শীর্ষ মানবাধিকার প্রতিনিধিরা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কিছু শক্তি চায় নির্বাচন যেন না হয়।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের একটি হোটেলে রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি কেরি কেনেডির নেতৃত্বে শীর্ষ মানবাধিকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ বলেন।

এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করা ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বৈঠকের বিস্তারিত গণমাধ্যমকে জানায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস সতর্ক করে বলেন, কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছিল। নির্বাচন যাতে কখনো না হয় তা নিশ্চিত করতে কিছু শক্তি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা জানি না তারা কার জন্য কাজ করছে। বিপুল পরিমাণ টাকা ঢালা হচ্ছে; যার সুবিধাভোগীরা দেশের ভেতরে এবং বাইরে রয়েছে। তারা ভালোভাবে প্রস্তুত, এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়। সামনের কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ; যে ধরনের ভালো নির্বাচন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে কখনো হয়নি। বছরের পর বছর সত্যিকারের ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি। এবার আমরা তাদের স্বাগত জানাতে চাই, বিশেষ করে নারীদের এবং সবার অংশগ্রহণ উদযাপন করতে চাই। কীভাবে ভোট দিতে হয় তার প্রক্রিয়া জানাতে আমরা ব্যাপক প্রচারণা চালাব। আমরাদের লক্ষ্য দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের আরও ঘন ঘন বাংলাদেশ সফরের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগের এই সময়টা ‘গুরুত্বপূর্ণ’। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাদের বাংলাদেশ সফর অব্যাহত রাখা। প্রত্যেকবার আপনারা সফরে এলে ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো নতুন করে আলোর মুখ দেখে। শেষ পর্যন্ত আপনারাই জনগণের কণ্ঠস্বর।

চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার সুরক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি ভেঙে পড়া ব্যবস্থার মধ্যে যাত্রা শুরু করি। গত বছরের হত্যাকাণ্ড তদন্তে আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তাদের প্রতিবেদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উন্মোচিত হয়। এরপর থেকে আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু করেছি, এটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

জোরপূর্বক গুম তদন্তে একটি কমিশন গঠন করার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মানুষ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে আসছে, একটি ঘটনার চেয়ে আরেকটি ঘটনা আরও বেশি ভয়ানক। বছরের পর বছর এই ভয়ংকর ঘটনাগুলো ঘটেছে। অনেক মানুষকে আয়না ঘরে রাখা হয়েছিল, অনেক সময় তারা জানতও না কেন সেখানে রাখা হয়েছে। কমিশন এখনও পূর্ণ প্রতিবেদন দেয়নি, তবে নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সংস্কারের জন্য ১১টি কমিশন গঠন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এরই মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবসমূহ পর্যালোচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোও এই প্রক্রিয়ার অংশ। আশা করছি, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারগুলো অক্টোবরের মধ্যে খসড়া আকারে তৈরি হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে।

অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। আশা করি মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ বিষয়ে আওয়াজ তুলবে, ব্যাংকগুলো যেন চুরি অর্থ লুকিয়ে রাখতে না পারে। এসব অর্থের সত্যিকারের মালিক জনগণ।

বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা কাঠামোগত সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছে, যাতে দেশ আর কখনো সেই পরিস্থিতিতে না ফিরে যায় যা জুলাইয়ের মতো গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে।

বৈঠকে মানবাধিকার কর্মীরা মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় নিরাপত্তা সেক্টরের সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন বলেন, বেশি সংখ্যক সংস্কার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যেন সংসদ গঠনের পরও তারা এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রবার্ট এফ. কেনেডি মানবাধিকার সংস্থার আইনজীবী ক্যাথরিন কুপার; সিভিকাস-এর সাধারণ সম্পাদক মনদীপ তিওয়ানা, ফোর্টিফাই রাইটস-এর প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্মিথ; টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রাশিদ দিয়া; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ক্যারোলিন ন্যাশ; ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং আন্তর্জাতিক স্কলার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান এবং সিভিকাস জাতিসংঘের উপদেষ্টা জেসেলিনা রানা।

এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ