বরিশাল: বাকেরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে পৌরসভার দিকে যেতে ডান পাশের ফুটপাতে বেশ কিছু মানুষের ভিড়। কাঠের চৌকিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে একজন নারী ও একজন পুরুষ শীতের পিঠা বিক্রি করছেন।
শীতে ফুটপাতে বসে ভাপা আর কাচিখোলা (চঠা) পিঠা বিক্রি করেই তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ চলে। তবে পিঠার মৌসুম শেষ হলে কখনো আখ, কখনো তাল কিংবা মৌসুমী দেশীয় ফল এখানে বসেই বিক্রি করেন তারা। আর এভাবে বাকেরগঞ্জ পৌরসভা কমপ্লেক্সের পাশে বসেই পাঁচটি বছর কাটিয়েছেন মো. ফিরোজ খান ও তার স্ত্রী নাসিমা বেগম।
হঠাৎ করেই মনে শখ জাগে এবারের পৌরসভা নির্বাচনে বাকেরগঞ্জের নিজ আবাসস্থল ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন। তাই স্বজনদের সমর্থন নিয়ে কিনে ফেলেন মনোনায়নপত্র।
শুধু স্বাক্ষরজ্ঞান অর্জনকারী বর্তমান পৌর নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থী পিঠা বিক্রেতা মো. ফিরোজ খান এমনটাই জানালেন বাংলানিউজকে।
তবে এ শখ বহুদিন ধরে মনে পুষে রেখেছিলেন তিনি। দাদা ছাদেম আলী খান বাকেরগঞ্জের এ এলাকার নামকরা মেম্বর ছিলেন। তিনি জীবনে বহু মানুষের উপকার করেছেন, বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই তার অনুকরণ করে তিনিও এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়ে সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে চান।
মো. ফিরোজ খান জানান, এ ওয়ার্ডের খান বাড়ির মৃত মো. বসির খানের ছেলে তিনি। তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তার সংসারে। ছেলেরা সবাই যে যার মতো করে কর্মব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন। বড় মেয়ে শশুরবাড়িতে থাকেন। আর ছোট মেয়ে কাজল আক্তার স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
বড় ছেলের পরিবার ও ছোট মেয়েকে নিয়েই তিনি ও তার স্ত্রী এ বাড়িতে থাকেন। ছেলেরা সর্বদা তার খোঁজ রাখছেন তারপরেও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ফুটপাতের এ জায়গায় ব্যবসা করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও অস্থায়ী ভিত্তিতে পৌরসভায় নৈশপ্রহরীর চাকরিও করেন তিনি। চাকরিটি বর্তমান মেয়র লোকমান ডাকুয়াই পাইয়ে দিয়েছিলেন।
সন্ধ্যার পরে বহু মানুষ তার দোকানে আসেন পিঠা খাওয়ার জন্য। ভাপা বা চঠা, যে পিঠাই খান দাম পড়বে পাঁচ টাকা। পাশাপাশি ১০ টাকায় আরো পাওয়া যায় সিদ্ধ ডিম।
তিনি বলেন, জীবনে কোনোদিন স্কুলে পড়েননি। তবে স্বাক্ষরজ্ঞানটুকু অর্জন করেছেন। দাদা ছাদেম আলী এ এলাকার এক সময় মেম্বর ছিলেন। তিনি যেমন মানুষকে ভালোবাসতেন তেমনি তাকেও মানুষ ভালোবাসতেন। আমাকেও এ এলাকার মানুষ ভালোবাসে। বহু মানুষ আসে এখানে, কেউ পিঠা খেতে আবার কেউ ভালোবাসার টানে। তিনি বলেন, এ ভালোবাসা আর দাদার রেখে যাওয়া অনুপ্রেরণাই তাকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশা রেখে মনোনায়নপত্রে কোনো কিছু গোপন করিনি। যারা ভোট দিয়ে জয়ী করবে তারাও সব জানে। আর জয়ী হলে আমার মতো অসহায় গরীব যারা অন্ধকারে রয়েছেন তাদের আলোতে নিয়ে আসবো। পাশাপাশি বিপদে আপদে সবার পাশেই থাকবো।
তিনি বলেন, এ ওয়ার্ডে আমার সঙ্গে আরো চারজন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, সেলিম রেজা, লিটন, মাসুদ রানা ও শিউলি বেগম।
পাশেই থাকা ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আ. খালেক হাওলাদার বলেন, পয়সা থাকলেই মানুষ চেনা যায়না। ও ভালো মানুষ, এলাকার সবাই ওকে ভালোবাসে। আর তাই ও ভোটে দাঁড়াইছে বইলা আমরাও খুশি।
একই ভাবে পিঠা খেতে আসা ক্রেতারাও ফিরোজ খানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫
আরএ