সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস থেকে: কাঁধে ব্যাগ, হাতে পানির বোতল নিয়ে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে দ্রুতগতিতে ঢুকলেন ভদ্রলোক। কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক তাকালেন।
এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই কালনী এক্সপ্রেস কি ছেড়ে দিয়েছে? দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি ওপরের দিকে রাখা মনিটরে তাকালেন, ‘বোধ হয় আরও পাঁচ মিনিট লাগবে’।
এবার মনিটরের দিকে তাকালেন ভদ্রলোকও। তাইতো, ঘড়িতে বাজে ৪টা ২৬ মিনিট।
মনিটর বলছে, ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছানোর সম্ভাব্য সময় ৪টা ২৭ মিনিট। ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় ৪টা ৩২ মিনিট। তার মানে আরও ৫-৬ মিনিট। এবার তিনি কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। মানিব্যাগে রাখা টিকিট চেক করে আবারও মানিব্যাগে রেখে দিলেন সেটা।
এগিয়ে আলাপ করতে নাম বললেন, আরিফুল হক। জানালেন, যাচ্ছেন সিলেট শহরেই।
তার বাহন কালনী এক্সপ্রেস বিকেল ৪টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা।
সেখান থেকে ঠিক সময়ে ছাড়লে ১৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়। তাই মিস করে ফেলার ভয়েই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন স্টেশনে।
বললেন, ‘অনেক আগে ট্রেনে উঠছিলাম, আজকে আবার যাচ্ছি। এখন ঈদ না, এ কারণে ট্রেন ঠিক টাইমে (নির্ধারিত সময়ে) চলে যায় কিনা এ নিয়ে ভয়ে ছিলাম। অকারণে দেরি হয়েছে। তবে মিস করি নাই এটাই বিষয়। ’
আরিফুল হকের সামনে মনিটরে চোখ রাখা ভদ্রলোকের নাম আমির। কোথাও যাবেন না।
এমনিতে ঘুরতে এসেছেন রেলওয়ে স্টেশনে। মনিটরে চোখ রেখে দেখছেন কোন ট্রেন কখন ঢাকায় আসবে, কোন ট্রেন কখন ঢাকা ছাড়বে। মনিটরে ভাসছে, কালনী এক্সপ্রেসসহ ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলী, তারাকান্দিগামী যমুনা এক্সপ্রেস, ঈশ্বরদীগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, জয়দেবপুরগামী তুরাগ এক্সপ্রেস (তুরাগ৩), আখাউড়াগামী তিতাস কমিউটার ট্রেনের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে আসার সময় এবং বিমানবন্দর স্টেশনে আসার ও এ স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় সূচি।
পাশের মনিটরেও ভাসছে সিলেট থেকে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের সময় সূচি।
সেদিকে তাকিয়ে আরিফুল বললেন, ‘এখন তো তাইলে আর কর্তৃপক্ষরে জিজ্ঞেস কইরা নাক সিঁটকানো হজম করা লাগবো না। এখানে মনিটরে তাকিয়েই জানা যাইবো কখন আসতেছে, কখন যাইতাছে। ট্রেনওতো ডিজিটাল হয়ে গেছে। ’
তখনও মনিটরে চোখ রেখে আমির। ‘কারও জন্য অপেক্ষা করছেন কি?’ প্রশ্ন করতেই উদাস জবাব, ‘না, এমনেই দেখি। ’ ‘এই মনিটর কবে লাগানো হইছে?’ তার উত্তর, ‘বলতে পারি না। ’
এরমধ্যে চলে এলো ট্রেন। সহযাত্রা হলেও ভিন্ন বগি হওয়ায় আরিফুল ছুটলেন আসন নিতে। সহযাত্রী বললেন, ‘ভাই, বাজে তো ৪টা ৩৮। এতো তাড়াতাড়ি চলে এলো? চলেন দৌড় দিই, বগি ধরি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এইচএ/এএ