খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগর বধ্যভূমি থেকে ফিরে: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের ‘স্বাধীনতার দলিল’ নামে ১৫ খণ্ডের লিখিত দলিল রয়েছে। দঃখজনক হলেও সত্য, সেই ১৫ খণ্ডের মধ্যে কোথাও স্থান পায়নি চুকনগরের গণহত্যা।
মুজিববাহিনী খুলনা জেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার শ ম বাবর আলী বিস্ময় প্রকাশ করে বাংলানিউজকে একথা বলেন।
তিনি বলেন, চুকনগরের গণহত্যাটি দেশের সবচেয়ে বড় গণহত্যা। এতো বড় শিহরণ জাগানো একটি ঘটনা স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রে স্থান পায়নি, এটা দুঃখের বিষয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনার চুকনগরের ঘটনাটি স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। প্রথম প্রকাশিত স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্রে তো নয়ই, ২০০৪ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ সংস্করণেও চুকনগর গণহত্যার কোনো বিবরণ নেই। এর অষ্টম খণ্ডে খুলনা বিভাগে গণহত্যা অংশে কেবল ডুমুরিয়া, চুকনগরে ভারতগামী ৮-১০ হাজার মানুষের মধ্যে থাকা নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের পৈশাচিক নির্যাতনের খণ্ডিত একটি অংশের বিবরণ আছে।
চুকনগর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী, চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও চুকনগর কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, চুকনগর ট্রাজেডি ছিলো বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যার একক বৃহত্তম ঘটনা। অথচ এ ঘটনার কথা অজানা থেকে গেছে দেশবাসী ওবিশ্ববাসীর কাছে। মিডিয়ায় কিছু প্রকাশ হওয়ার কারণে কেউ কেউ এখন জানেন। তবে নতুন প্রজন্মকে জানাতে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এতো বড় ট্রাজেডির কথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ-দলিলপত্রে স্থান পায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র পড়তে গিয়ে চুকনগর গণহত্যার বিবরণ না পেয়ে হতবাক হই। পরে ইতিহাস লেখক ও সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তবে ইতিহাসে স্থান না পেলেও ২০০৬ সালে সরকারি উদ্যোগে পাতাখোলা বিলের দক্ষিণ প্রান্তে শহীদদের স্মরণে গড়ে তোলা হয় শহীদ স্মৃতিসৌধ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
এমআরএম/এএ
** বাবাসহ পরিবারের ৮ সদস্যের মৃত্যু দেখেছি পাটিতে লুকিয়ে
** মাটি খুঁড়লে এখনও মেলে কঙ্কাল
** ‘রক্তের স্রোতে লাশ ভাসতি দেহিছি’
** অরক্ষিত বধ্যভূমি, নেই গণহত্যার নামফলক