ঢাকা: শুরু হয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। গত ১২ ডিসেম্বর পদ্মার জাজিরা পাড়ে নদীশাসন ও মাওয়া পাড়ে পাইলিং কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়।
চূড়ান্ত পর্যায়ের পাইলিং শুরু করার আগে ইতোমধ্যেই মূল সেতুর ভৌত-অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ১৬ শতাংশ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া নদীশাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১২ শতাংশ।
গত রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন
প্রকল্পগুলোর জুলাই-নভেম্বর ২০১৫ সময়ের অগ্রগতির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এতে উঠে এসেছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের নানা অগ্রগতির বিষয়।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ইতোমধ্যে মূল সেতুর ১০টি টেস্ট পাইলের মধ্যে তিনটি টেস্ট পাইল ড্রাইভ, ভায়াডাক্টের ১৬টি টেস্ট পাইলের মধ্যে সাতটি টেস্ট পাইল ড্রাইভ এবং ৬৪টি অ্যাংকর পাইলের মধ্যে ২৮টি অ্যাংকর পাইল ড্রাইভ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে মূল সেতুর ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পাইলিংয়ের কাজ কিছুদিন আগে শুরু হলেও মূল সেতুর কাজ আমরা এক বছর আগে থেকেই শুরু করেছি। আমরা কোথাও নির্দিষ্টভাবে পাইলিংয়ের কাজের কথা উল্লেখ করিনি। মূল সেতুর কাজের মধ্যে পাইলিং একটা অংশ মাত্র। সামগ্রিকভাবে বলতে পারি,
মূল সেতুর ভৌত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৬ শতাংশ।
এছাড়া নদীশাসনের কাজ হয়েছে ১২ শতাংশ। ১ হাজার ৩৭০টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে বাকিগুলো দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
প্লট পেল ১৩৭০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার
সেতু প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত পুনর্বাসন খাত থেকে গত নভেম্বর মাস পযর্ন্ত মোট ৫৫০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত সহায়তা বাবদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সাইটগুলোতে এই সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৫৯২টি প্লটের মধ্যে ১ হাজার ৩৭০টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অবশিষ্ট প্লটগুলোর ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পরে যথাসময়ে প্লটগুলো হস্তান্তর করা হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সেতু বিভাগ।
নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ১২ শতাংশ
চলতি বছরের নভেম্বর পযর্ন্ত পদ্মাসেতুর নদীশাসনের কাজ ১২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ কাজের জন্য প্রতিদিন ২০ হাজার ৩শ’টি ব্লক তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদারের নিজস্ব স্থাপনা যেমন অফিস, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশেড, স্টোর হাউজ, লেবারশেড ও জেটি নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
সেতু এলাকায় ৬৭৫৫০টি নতুন গাছের চারা
প্রকল্পের পরিবেশ কার্যক্রমের আওতায় পদ্মাসেতুর উভয় পাশে, পুনর্বাসন ও সার্ভিস এলাকাগুলো নানা ধরনের গাছের চারা লাগানো হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর পযর্ন্ত ৬৭ হাজার ৫৫০টি নতুন গাছের চারা লাগানো হয়েছে। কিছুদিন পর পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকায় দেখা যাবে সবুজের সমারোহ।
শেষ পর্যায়ে সংযোগ সড়কের কাজ
এ পযর্ন্ত জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২ এর ভৌত অগ্রগতি যথাক্রমে ৫৩, ৬০ এবং ৬৭ শতাংশ।
মাওয়া জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজ ২০১৬ সালের অক্টোবরে শেষ হবে। সে সময়ে সংযোগ সড়ক দু’টি চালু রাখার লক্ষ্যে ফেরীঘাট অন্যত্র স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সেতু বিভাগ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। এর ফলে সময় ও দূরত্ব উভয়ই কমে আসবে।
এদিকে পদ্মাসেতু প্রকল্পের নানা অবকাঠামো বৃদ্ধি, নকশা পরিবর্তন, ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি, পরামর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে প্রথম সংশোধনে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ভাঙনসহ অন্যান্য কারণে দ্বিতীয় সংশোধনে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি ২০০৯ মাসের মধ্যে শেষ হবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্প।
সেতুটি নির্মিত হলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বেড়ে যাবে মোট দেশজ উৎপাদনের(জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হার।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এমআইএস/আরআই/এএসআর