ঢাকা, রবিবার, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিল সেচে বোরো চাষের প্রস্তুতি

তপন চক্রবর্তী, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৬
বিল সেচে বোরো চাষের প্রস্তুতি ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তালা (সাতক্ষীরা): কৃষকের রাতদিন যেন সব সমান হয়ে গেছে। কয়েক দিন পরই রোপন করা হবে বোরো ধান।

এজন্য হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে বিলের পানি নিষ্কাশন করতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিলের পাশে বসবাসরত কৃষকরা।  
 
জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার কৃষকরা আমন চাষ করতে পারেননি। তারা বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল। কৃষকের ফসল ফলানোর জন্য প্রস্তুতির শেষ নেই। পানি সেচ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।  
 
উপজেলার ইসলামকাটি, ঘোনা, ডেমশাখোলা, বারাত, মোহনা, কলিয়া, দেওয়ানীপাড়া, শুভাষিনী, লক্ষ্মণপুর, মির্জাপুর, কেসমতঘোনা, কাজীডাঙ্গাসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের বিলের পানি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত পাম্প দিয়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। কপোতাক্ষ নদ ভরাটের কারণে বছরের ছয় মাস এসব বিল পানিতে তলিয়ে থাকে। বোরো আবাদের সময় এলে এলাকার মানুষ পানি সেচ করে ফসল ফলানোর চেষ্টা করেন। কারণ এ এলাকার কৃষকের একটি মাত্র ফসল, বোরো চাষ।
 
এদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা আমন ধানের চাষ করতে পারেননি। চলতি মৌসুমে বোরো চাষ করতে না পারলে কৃষকদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য উপজেলার কপোতাক্ষ পাড়ের বিলগুলোয় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে পানি নিষ্কাশনের জন্য দিনরাত সেচ দিচ্ছেন।  
 
তালা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার বিলের পানি যদি সেচ বা পাম্পের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে সব বিলে বোরো চাষা করা সম্ভব হবে।
 
সরেজমিনে তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কপোতাক্ষ অববাহিকার অনেক বিল এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। কপোতাক্ষ নদ দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বিলগুলো পানিতে জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। উপজেলার ইসলামকাটি, ঘোনা, ডেমশাখোলা, বারাত, মোহনা, কলিয়া, দেওয়ানীপাড়া, শুভাষিনী, লক্ষ্মণপুর, মির্জাপুর, কেসমতঘোনা, কাজীডাঙ্গাসহ প্রায় ২০টি গ্রামের বিল তথা নিচু জমিতে আমন চাষ হয়নি।  

এজন্য বোরো চাষ করতে কৃষকরা এসব বিলের পানি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করছেন। এর মধ্যে তালা-পাটকেলঘাটা সড়কের ইসলামকাটি ব্রিজের মাথায় ১৬টি শ্যালোমেশিন দিয়ে দিন-রাত পানি সেচ করে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।
 
কেসমত ঘোনা গ্রামের কৃষক আকবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, ধার-দেনা করে কোনোভাবে জীবন চলছে। আমন পাইনি, আবার যদি বোরো মার খায় তাহলে বাঁচবো কি করে? আর এজন্যই তো দিন-রাত খাটছি।
 
ইসলামকাটি গ্রামের হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বছরের ছয় মাস তাদের পানির সঙ্গে লড়াই করতে হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অনেক এলাকা। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। এজন্য তারা আমন চাষ করতে পারেননি। এবার বোরো চাষের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বোরো চাষ না করতে পারলে তাদের দুঃখের শেষ থাকবে না।  
 
পানি সেচ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক জিয়াউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইসলামকাটি, ঘোনা, ডেমশাখোলাসহ প্রায় ২০ গ্রামের বিলের পানি নিষ্কাশন করছেন তারা। পানি সেচ শেষ করতে একমাস সময় লাগবে। চুক্তির মাধ্যমে তারা ওই পানি সেচ করছেন বলেও জানান তিনি।

ইসলামকাটি ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিএম সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইসলামকাটি বিলের মধ্যে তাদের পাঁচ বিঘা জমি আছে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে তারা ওই জমিতে আমন চাষ করতে পারেননি। এজন্য নিজেদের উদ্যোগে এবার পানি সেচ করে বোরো আবাদ করার চেষ্টা করছেন। পানি নিষ্কাশন না হলে বোরো আবাদ হবে না।  
 
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামসুল আলম বাংলানিউজ জানান, অনেক কৃষক সেচ-পাম্প ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এলাকার বিলের পানি নিষ্কাশন না হলে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তবে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ না থাকায় কৃষকরা নিজেদের অর্থে পানি সেচ করছে।  
 
ইসলামকাটি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রঞ্জন রায় বাংলানিউজকে বলেন, কপোতাক্ষ নদ দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় নিজেদের অর্থে কৃষকরা পানি সেচ করে বোরো আবাদ করার চেষ্টা করছেন।  
 
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে পানি সেচ দিচ্ছে।  
 
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, বোরো চাষ করতে অন্য বিলেও সেচ কার্যক্রম চালানো হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৮ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৬   
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।