ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মহাসড়কে দাপটে চলছে সিএনজি চালিত অটোরিকশ‍া!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
মহাসড়কে দাপটে চলছে সিএনজি চালিত অটোরিকশ‍া! ছবি: শাকিল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক থেকে ফিরে: দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা বন্ধ করলেও এর কোনো তোয়াক্কাই করছেন না অটোরিকশাসহ ব্যাটারিচালিত রিকশা, লেগুনা, টেম্পু চালকরা।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক সরেজমিনে গেলে এ চিত্র দেখা যায়।

সিএনজি চালকরা বলেন,  হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় থানার সঙ্গে সিস্টেম করেই মহাসড়কে চালাচ্ছেন অটোরিকশাগুলো। তারা কড়াকড়ি করলে সিএনজি চালানো যেতো না। তবে চালকদের এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আইন-ভাঙ‍ার প্রবণতা থেকেই সিএনজি চালকরা এ অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে।

মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোনো সিএনজি চালিত অটোরিকশা ন‍া চললেও, জুরাইন বাসস্ট্যান্ডে অটোরিকশার অভয়ারণ্য। কারণ, অধিকাংশ যাত্রী পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয় সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে। সাধারণত, এই সিএনজিগুলো ব্রিজ পার করার পর আবার ফেরত আসে জুরাইনে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাওয়া মহাসড়ক হয়ে জুরাইন থেকে নতুন কারাগার (কেরানীগঞ্জ,রাজেন্দ্রপুর) পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চলছে সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুনা। আবার সুযোগে মাওয়া পযর্ন্ত যাচ্ছে এসব সিএনজি অটোরিকশা। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে মহাসড়ককে যান চলাচল করতে দেখা যায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় পথচারীও পড়েছেন চরম বিপাকে।

হাবিব নামে এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, মহাসড়কে সিএনজি চলা নিষেধ এটা আমরাও জানি। এরপরও সুযোগ পেয়ে চালাই। মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালাতে প্রতি মাসে পুলিশকে ৫শ’ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া যখন-তখন সিএনজি আটকিয়ে পঞ্চ‍াশ/একশ টাকা তো আছেই। আমরা এভাবেই চালাই, অভিযান চালাইলে সিএনজি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করি। রেকারে দিলে বের করে আবার চালাই-এটা ব্যাপার না।
 

আইন মানেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ‘আমরা সুযোগ চাই, তারা আমাদের সুযোগ করে দেয়। তাহলে আইন মানবো কেন? বলে পাল্টা প্রশ্ন করেন এই সিএনজি চালক।

সিএনজি অটোরিকশা বা তিন চাকার গাড়ির কারণে, মহাসড়কে দুরপাল্লার যানবাহনগুলো বেশির ভাগ দুর্ঘটনায় পড়ে জানান মেঘনা পরিবহবনের চালক হানিফ।

তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালাতে চালাতে হঠা‍ৎ একটা সিএনজি লেগুনা সামনে এসে পড়ে, এতে গাড়ি চালকের সমস্যা হয়। সরকার বারবার নিষেধ করার পরও এদের থামানো যাচ্ছে না।

 তবে এক্ষেত্রে তিনি আইন-প্রয়োগে অবহেলাকে দায়ী করেন।

ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা। মহাসড়কে নির্বিঘ্নে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলার বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য যোগ‍াযোগ করা হলে, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলার বিষয়টি স্বীকার করলেও পুলিশের লেনদেন বিষয়টি অস্বীকার করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন।
 

মনির হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও এ রুটে চুরি করে আমাদের অগোচরে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা বের করছেন। আমরা কয়েকদিন পরপরেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। তখন পালিয়ে যায়। এরপরও আবার আসে। এটা আমাদের আইন-ভাঙার প্রবণতা থেকে হচ্ছে। সবাই যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতো তাহলে এটা হতো না।

সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে পুলিশের লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার থানার কোনো অফিসার এসবের সঙ্গে জড়িত নয়। কোনো সিএনজি চালক যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে, তখনেই সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে কেউ যদি বিচ্ছিন্ন ভাবে অসৎ কাজ করে এ বিষয়ে আমি বলতে প‍ারি না। তবে মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।
 

বিগত এক বছর থেকে মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, থ্রি-হইলার, লেগুনা, ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে সরকার। এই সিদ্ধান্ত কেউ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সময় হুঁশিয়ারি দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
এমসি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।