ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জেল হত্যা আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
জেল হত্যা আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়

ঢাকা: জেল হত্যা দিবস বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) । বাঙালি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয় পঁচাত্তরের এই দিনে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীরা বর্বরোচিতভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মধ্যে আরেকটি বর্বর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে তারা।

স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্র ০৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর আজীবন রাজনৈতিক সহচর, বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেন সেই জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে জেলখানার অভ্যন্তরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযু্দ্ধের পরাজিত শত্রুরা এদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র জাতির পিতাকে হত্যা করে। এরপর খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী ওই চক্র এদেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। বাংলাদেশ যেন আর এগোতে না পারে, স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ হয়, স্বাধীন বাংলাদেশ যেন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়- সেসব ষড়যন্ত্র নিয়েই এগোতে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র।

এরই অংশ হিসেবে এবং এদেশে যেন কোনোদিন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে- সে ষড়যন্ত্র থেকেই নিরাপদ স্থান জেলখানার অভ্যন্তরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে তারা।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন জাতীয় চার নেতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী ছিলেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান।

শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, সকল আন্দোলন-সংগ্রামে এই চার নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহযোদ্ধা হিসেবে তার পাশে থেকেছেন। বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে যখন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে এই চার নেতা আন্দোলন-সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন।  
ঘাতক চক্রের লক্ষ্য ছিল, বাঙালিকে নেতৃত্বশূন্য করে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের পদানত করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে আটক করে রাখার পর যে চার নেতা বঙ্গবন্ধুর হয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনেন, সেই জাতীয় চার নেতাকেও বঙ্গবন্ধুর মতো নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

মানবতাবোধের চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হচ্ছে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এদেশেকে স্বাধীন করেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করে বিজয়ের পতাকা উঠিয়ে ধরেছেন, সেই চার নেতাকে চরম নির্মমতার স্বাক্ষর রেখে ৩ নভেম্বরে হত্যা করা হয়।

দিনটিও বাঙালি জাতির জীবনে আরেকটি কলঙ্কময় দিন, কালো অধ্যায়। বাংলার জনগণ জাতীয় এ চার নেতাক আজীবন স্মরণ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।