ঢাকা, বুধবার, ১ কার্তিক ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুই যুদ্ধাপরাধীর বই!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
ইসলামিক ফাউন্ডেশনে দুই যুদ্ধাপরাধীর বই!

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মিলছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত দু’জনের লেখা বই। ওই দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া মতিউর রহমান নিজামী ও আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগরত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লেখা বইগুলো শোভা পাচ্ছে ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটেও।


 
রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত অপরাধীর বই রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাওয়াকে খুবই ‘দুঃখজনক’ বলছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘এমনটি হওয়ার কথা নয়’।
 
ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্বলিত বইগুলো প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় কেন্দ্রে গেলেই কিনতে পারছেন সাধারণ মানুষ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশনার তালিকায় সাঈদীর লেখা ৫টি ও নিজামীর লেখা একটি বই রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বায়তুল মোকাররমের একটি বই বিক্রয় কেন্দ্রে ওই তালিকার একটি বই খোঁজ করা হলে বিক্রেতা আছে বলেও জানান।
 
সাঈদীর লেখা ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলাম’ বইটি কিনতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, ‘বইটি আছে, তবে কোথায় যেন একটু খুঁজে দেখতে হবে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন’।
 
ওয়েবসাইটে প্রকাশনার তালিকায় দেখা যায়, ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ বিভাগে সাঈদীর লেখা ৪টি বই রয়েছে। তালিকার ৬৬ নম্বরে রয়েছে ‘বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ’, ১৮৮ নম্বরে রয়েছে ‘বর্তমান বিশ্বে ইসলামী পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা’, ২৭৬ নম্বরে রয়েছে ‘বেহেশতের চাবি’ ও ৩২৬ নম্বরে রয়েছে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলাম’ নামের বইগুলো রয়েছে। এছাড়া, ইসলামী আইন ও ফিকাহ শাস্ত্র বিভাগের ২১ নম্বরে রয়েছে ‘ইসলামের ভূমি, কৃষি, শিল্প ও শ্রমিক আইন’ নামের বইটি।

লেখক পরিচিতিতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আগে কোথাও মো., কোথাও মাওলানা আবার কোথাও কোথাও আল্লামা লেখা রয়েছে।
 
হাদীসে রাসূল (সা.) বিভাগের বইয়ের তালিকার ৫৫ নম্বরে রয়েছে নিজামীর ‘কাসাসুল হাদীস’ বইটি। এখানে লেখক পরিচিতিতে তার নাম রয়েছে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধীর বই পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক। এটি আদতে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নের জায়গায় নিয়ে যায়। সরকার যেখানে তাদের বিচার করছে, তাদের লেখা বই এখনো কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানেই পাওয়া যাবে?’
 
এখানে সঠিক তদারকির অভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা হয়তো বিএনপির সময়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু যখন তারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হলেন, তখন কেন সরানো হল না? যিনি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন, তিনি এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না’।
 
এসব বইয়ের মাধ্যমে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানে এমন প্রশ্নবিদ্ধ বই আছে, সেগুলো খুঁজে বের করে বাদ দেওয়ার এখনই সময়’।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। পরে তার সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমন ধরনের কোনো বই না থাকারই কথা। তারপরেও আপনি প্রকাশনা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখেন’।
 
জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ঘাতক আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা। গত ১১ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হয় দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর। অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের রিভিউ ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুনর্বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
পিএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।