ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাতটায় নিরিবিলি, সাড়ে সাতটায় দৌড়ঝাঁপ!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
সাতটায় নিরিবিলি, সাড়ে সাতটায় দৌড়ঝাঁপ! ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে: সকাল ৭টা, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর। একটার পর একটা গাড়ি আসছে, সে তুলনায় যাত্রীর চাপ একবারেই কম।

নিরিবিলিতে যাত্রী নিয়ে পরিবহনগুলো ছুটছে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে।

সাড়ে ৭টার পর থেকে কর্মস্থলগামী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে মিরপুর ১০ নম্বরে। পরিবহন ধরতে ধীরে ধীরে শত শত মানুষ ভিড় জমে গোলচত্বর এলাকায়। এবার দেখা যায়, পরিবহন সংকট। ফলে শুরু হয়, অফিসগামীদের পরিবহনে ওঠা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়ে চার দিক থেকে পরিবহন আসে। এতে করে সকাল বেলায় মানুষজট ও যানজটে বিপর্যস্ত চেহারা ধারণ করে ১০ নম্বর গোলচত্বর। ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠতে হয় যাত্রীদের। আর পরিবহনগুলোর মধ্যেও চলে ওভারটেকিংয়ের প্রতিযোগিতা।

গোলচত্বর ঘুরে দেখা যায়, সাড়ে ৭টার পর থেকে শত শত অফিসগামী মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তারা। একটি বাস এলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সবাই। ভিড় ঠেলে দু’একজন বাসে উঠতে পারলেও বাকিরা উঠতে পারছেন না। কারণ বাসের বেশিরভাগ আসন আগে থেকেই ভর্তি হয়ে আছে। এ জন্য কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশা কিংবা সিএসজি চালিত অটোরিকশায় কর্মস্থলে রওনা হচ্ছেন।

সাড়ে ৭টা থেকে মতিঝিলের বাসের জন্য চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা বাবলা হয়দার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রতিদিন বাসের জন্য হেনস্তা হতে হয়। বাসে উঠতে পারা মানে বিশাল যুদ্ধে জয়ী হওয়া। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। এরপর বাসে উঠে শান্তি নেই, এই রোডে দশ নম্বর থেকে বিজয় সরণি পযর্ন্ত বাস চলে থেমে থেমে। একটু বের হতে এদিক ওদিক হলে অফিস যেতে দেরি হবেই। আমার প্রতিদিন দুই/আড়াই ঘণ্টা হাতে রাখতেই হবে।

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে রাজধানীর আজিমপুর, মতিঝিল, গুলিস্তান, বনানী-গুলশান, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ ও মাওয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাস পাওয়া যায়। এ কারণে, অন্যস্থানের তুলনায় এখানে পরিবহনের সংখ্যাও বেশি। এরপরও অফিসের সময় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে পরিবহন সংকট দেখা যায়। এছাড়া বেশির ভাগ পরিবহন সিটিং সার্ভিস হওয়ায় মানুষকে আরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এদিকে মিরপুর ১০, সাড়ে ১১ এবং ১২ নম্বর থেকে গাড়িগুলো ভরে আসায়, কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়ার কর্মমুখী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা পড়েন সবচেয়ে বিপাকে। এ এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের নাগাল পান না। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

কমলাপুরগামী স্বকল্প পরিবহনের হেলপার আজিজ বলেন, এ রোডে প্রতিদিন সক‍াল বেলা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অন্য এলাকা থেকে এখানে গণপরিবহন বেশি থাকার পরও পরিবহন সংকট দেখা দেয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা মিরপুর ১০ থেকে খামারবাড়ি পযর্ন্ত তীব্র যানজট। এটুকু পার হতে দেড় ঘণ্টা দুই ঘণ্টা সময় লাগে।

মিরপুর গোলচত্বরের যানজট ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ঠেকানোর কাজে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ট্র্যাফিক সার্জেনকেও উপস্থিত দেখা যায়। আইন অমান্য করলে জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা মামলা ঠুকে দিচ্ছেন।

কথা হয় সার্জেন আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদিনে ৪ জন সার্জেন এখানে দায়িত্ব পালন করি। সকালে বেলাটাই হিমশিম খেতে হয়। মিরপুর ১০ থেকে সব এলাকার বাস ছাড়ার কারণে জটলা বেশি হয়। এখানে আগে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিলো, আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এমসি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।