ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জোর করে রেলে চাকরি দেন আব্দুল হাই

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
জোর করে রেলে চাকরি দেন আব্দুল হাই ছবি: শোয়েব মিথুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আব্দুর রব, বয়স ছাপ্পান্ন। বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলায়।

জীবিকার সন্ধানে কুড়ি বছর বয়সে ঢাকায় আসেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের নিকটে দেন ছোট্ট চায়ের দোকান। দোকানের ক্রেতা হিসেবে পরিচয় হয় তৎকালীন রেলওয়ের কর্মচারী আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে।

বিধির কি বিধ‍ান এই পরিচয়ে দোকান ছেড়ে রেলে চাকরির ‍অফার করেন আব্দুল হাই। তার কথা মতো দোকান ছেড়ে রেলওয়ের প্রকৌশলীদের সহকারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন আব্দুর রব। তখন তার ম‍ূল বেতন ছিল ২৫০ টাকা। সব মিলিয়ে ৪৯০ টাকা মাসে পেতেন তিনি।

বর্তমানে তার ম‍ূল বেতন ১৫ হাজার ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে পান ২৮ হাজার টাকা। কাজের পরিধিও বেড়েছে আব্দুর রবের। শুরুতে বগি পরিষ্কারের কাজ করতেন। এখন ১৫ বছর ধরে রেলের ইঞ্জিনের সঙ্গে বগি জোড়া লাগানোর কাজ করেন রব। এমনকি বগি জোড়া লাগানোর কোনো ত্রুটি হলে তিনি ছুটে যান।

বুধবার (০২ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে হাতুড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় আব্দুর রবকে। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে আলাপাকালে এ তথ্য জানা যায়।
 
রেলে চাকরির সার্বিক বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার দোকানের ক্রেতা সাবেক রেল কর্মকর্তা আব্দুল হাই আমাকে ধরে নিয়ে রেলের চাকরি দিয়েছেন। আমি চাকরিতে যোগদান করে এক সপ্তাহ পরে চলে গিয়েছিলাম। আবার আমাকে অনেক বুঝিয়ে চাকরিতে নিয়ে আসা হয়েছে। তখন মূল বেতন ছিল মাত্র ২৫০ টাকা। তবে ২৫০ টাকায় ভালো মতো চলতে পেরেছি। এখন সব মিলিয়ে ২৮ হাজার টাকা বেতন পাই। তারপরও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
 
বর্তমানে চার সন্তানের জনক আব্দুর রব। স্বপরিবারে বসবাস করেন শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে। ১০ বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে সাইফুল আলম একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে রেলওয়েতে কর্মরত। মেঝো এবং ছোট মেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যায়নরত।
 
যৌবন থেকে শুরু করে ৩২টি বছর অতিবাহিত করেছেন এই কমলাপুরে। রেলের নানা কল্প-কাহিনীও লুকিয়ে আছে রবের মনে।

৩২ বছর আগের এবং বর্তমানের রেলওয়ের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুরুতে কমলাপুর থেকে ৩ থেকে ৪টি ট্রেন দেশের কিছু রুটে ছেড়ে যেতো। মানুষের মধ্যেও রেলেপথে আগে তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে বর্তমানে রেলের অনেক উন্নতি হয়েছে মানুষের আগ্রহও বেড়েছে’।
 
সকালে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় কমলাপুরে অবস্থান করছে লাল সবুজের নতুন কোচ নিয়ে ‘তিস্তা এক্সপ্রেস’। লাল-সবুজের কোচ সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’  কমলাপুর থেকে-দেওয়ানগঞ্জ রুটে ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। ইঞ্জিনের সঙ্গে বগি ঠিকমতো লেগেছে কিনা গভীর রাতে হাতুড়ি নিয়ে চেক করতে ছুটে চলেছেন আব্দুর রব। এভাবেই একে একে ৩২টি বছর রেলের সঙ্গে জীবন-অতিবাহিত করছেন তিনি। সব মিলিয়ে আর ৩টি বছর চাকরি করতে পারবেন তিনি। ৩২ বছরের রেল জীবনের নানা স্মৃতি কখনও ভোলার নয় বলে জানান রব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এমআইএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।