ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজকে খায়রুজ্জামান লিটন

খুনিদের ফাঁসি কার্যকর সময়ের দাবি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
খুনিদের ফাঁসি কার্যকর সময়ের দাবি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: ‘দিনটি ছিল ৩ নভেম্বর। খুব সকালেই আমরা বাবার মৃত্যুর সংবাদটা পাই।

মা অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়েন। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করেও যে মানুষটি কখনও হতোদ্যম হননি, তিনিই বাবার মৃত্যু সংবাদে মুষড়ে পড়েন। আজও দিনটি এলে মাসহ আমাদের গোটা পরিবার শোকে কাতর হয়ে পড়ে’।

‘জানি না, আমার মা ঘাতকদের সেই বহুল প্রত্যাশিত বিচার দেখে যেতে পারবেন কি-না’!

জেল হত্যা দিবস বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর), ইতিহাসের কলঙ্কময় দিন। সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের বড় ছেলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

শহীদ নেতার সন্তান লিটন বলেন, ‘সেদিন মা চাচ্ছিলেন, বাবার মরদেহটা যেনো রাজশাহীতে এনে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করতে দেওয়া হয়। কিন্তু খুনিরা তাতেও বাধ সাধে। পরে মায়ের জেদের কাছে তাদের পরাজিত হতে হয়। রাজশাহীতে আনা হয় বাবার মরদেহ’।

‘তবে আরও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে যায়। বাবার মরদেহটি পর্যন্ত আমাদের দেখতে দেওয়া হয়নি। মায়ের কাছে শুনেছি, বাবার রক্তমাখা মরদেহের বুকের ওপর চাদর চাপা দেওয়া ছিলো। মুখটা দেখে মনে হয়নি, কি নিদারুণ কষ্টে তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে’।
 
লিটন বলেন, ‘সেদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ঢুকে জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও আমার বাবা এএইচএম কামারুজ্জামানকে ১নং সেলে একসাথে জড়ো করা হয়। খুনি মোসলেম বাহিনী ব্রাশফায়ারে নিভিয়ে দেয় জাতির এ সূর্য সন্তানদের জীবন প্রদীপ। সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে যায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর বাংলাদেশের স্থপতিদের অন্যতম চার নেতার প্রাণ স্পন্দন। রেখে যায় একরাশ স্মৃতি’!

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম ও ইতিহাসের সঙ্গে যাদের নিবিড় সম্পর্ক সেই মানুষগুলো হারিয়ে গেলেও হারায়নি তাদের অমর কৃতিত্ব ও অসীম অবদান। হারিয়ে যাননি তাদের উত্তরসূরীরাও। এখনও বইছে স্বাধীন বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। তাদের স্মৃতিকে অম্লান রেখে রাজনীতিতে অবদান রাখছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম (ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে), জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ (তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে)। আমিও রাজশাহীবাসীর বদান্যতায় সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। যতোটুক সময় পেয়েছিলাম, বাবার রেখে যাওয়া কাজগুলো সমাধার চেষ্টা করেছি’।

বাবার রাজনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমার বাবা তার আদর্শ ভিত্তিক নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির কারণে ১৯৬২ থেকে ১৯৭৫-এই ১৩ বছরে কোনো নির্বাচনেই কখনও পরাজিত হননি। এটা সম্ভব হয়েছিলো তার অসাধারণ কর্মদক্ষতা, অপূর্ব সাংগঠনিক তৎপরতা আর চূড়ান্ত রাজনৈতিক সততার কারণে। তিনি দেশের মানুষকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সামিল করেছিলেন। এ দক্ষতা ও যোগ্যতাই তাকে তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আসীন করেছিলো। নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আজও জাতীয় নেতার আসনে সমাসীন রয়েছেন’।

লিটন বলেন, ‘মাত্র ৫২ বছরের জীবনের অর্ধেকটাই বাবা কাটিয়েছেন আন্দোলন আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অন্যান্য জাতীয় নেতাসহ বাংলাদেশকে স্বাধীনতা করার কাজে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। নিজের স্ত্রী-সন্তানের দিকে তাকানোরও ফুরসৎ পাননি। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতিকে মেধাশূন্য করতে আমার বাবাসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলো’।

‘তাদের মৃত্যুর পর দীর্ঘ ৪০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। অথচ আজও শাস্তি হলো না আত্মস্বীকৃত সেই খুনি আর তাদের নির্দেশদাতাদের। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আমার মতো শহীদ পরিবারের সন্তানের জন্য আর কী হতে পারে? জানি না, আমার মা তার জীবোদ্দশায় সেই বহুল প্রত্যাশিত বিচার দেখে যেতে পারবেন কি-না!’

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বছর ঘুরলে ঘুরে-ফিরে একই কথা বলতে হয়। তাই এগুলো আর বলতে ভালো লাগে না। তবে বিচারের বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে খুনিদের ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের দাবি’।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬

এসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।