ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নো লেডিস, নো লেডিস!

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
নো লেডিস, নো লেডিস! ছবি- রানা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

ঢাকা: বিকেল প্রায় সাড়ে চারটা। রাজলক্ষ্মী যাওয়ার জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নুসরাত আক্তার মহাখালী মোড়ে এক বাস থেকে অন্য বাসের পানে ছুটে যাচ্ছেন।

সিট না থাকায় হেলপার চিৎকার করছেন, নো লেডিস নো লেডিস!

নারীরা বাসে দাঁড়ালে বেশি জায়গা লাগে যুক্তি বলাকা বাসের হেলপারের।

দাঁড়িয়েই যাবো বলে নুসরাত বাসে ওঠার চেষ্টা করলেও গেটে হাত দিয়ে আটকে রেখে হেলপার বলেন, আরে আপা সিট নাই, লেডিস ওঠান যাইব না। একজন লেডিস উঠলে তিনজনের সমান জায়গা লাগে। পোলারাতো গাদাগাদি কইরা দাঁড়াইতে পারে। কিন্তু আপনারা কি পারবেন- বলেই নুসরাতকে হাত দিয়ে সরিয়ে হালকা চলন্ত বাসে টান দিয়ে ওঠান এক পুরুষ যাত্রীকে।

নারী যাত্রীরা বাসে উঠতে চাইলে এভাবেই নানা সমস্যার অজুহাত দেখান হেলপাররা, বলেন রুবি বেগম। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন নারীরা। অথচ দেশের কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।

রুবি বেগম বলেন, আমার বাসা টঙ্গী। এলাকায় কাপড়ের ছোট একটা দোকান আছে। দোকানের পণ্য কিনতে ঢাকা আসলেই সন্ধ্যার আগে বাসে ওঠার সময় রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। ছোট বাসগুলোতে মেয়েদের সংরক্ষিত ৫টি সিটে যাত্রী উঠলেই আর নারীদের বাসে উঠতে দেওয়া হয়না। তাহলে কি মেয়েরা বাসে যাবে না? প্রশ্ন করেন রুবি বেগম।

অন্যদিকে বাসের সংরক্ষিত মহিলা আসনের বাইরে অন্যকোনো সিটে নারীরা বসলেই অনেকেই বিরক্ত হয়ে ওঠেন বলে দাবি করেন ব্যাংক কর্মকর্তা নাছিমা ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সংরক্ষিত আসন সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের হয় তেমন কোনো ধারণা নেই বা তারা জেনেও না জানার ভান করেন। অনেক সময় নারীদের সংরক্ষিত আসনের বাইরে কোনো সিটে নারীরা বসতে গেলেই অনেক পুরুষ বলে ওঠেন, আপনাদের জন্যতো সিট আছে পুরুষদের সিটে কেন বসছেন।

বিকেল চারটার পর থেকেই অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরা শুরু হয়। ফেরার জন্য যানবাহনে উঠতেই যুদ্ধে নামতে হয় নারীদের, এমন দৃশ্যই দেখা যায় মহাখালী এলাকায়।

শুধু নারীরাই নন যানবাহন সঙ্কটে দুর্ভোগে পড়তে হয় প্রায় সব যাত্রীদেরই। দেখা যায়, একটি বাস আসলেই অসংখ্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কয়েকজন বাসে উঠতে সক্ষম হলেও বাকিরা ব্যর্থ হন। কেউ কেউ আবার কিছুটা দূর পাঁয়ে হেঁটেই আগানোর চেষ্টা করেন।

বেশ খানিকক্ষণ লেগুনায় উঠতে না পেরে পাঁয়ে হেঁটে জাহাঙ্গীর গেটের দিকে রওনা দিয়েছেন জসিম হোসেন।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের আইটি কর্মকর্তা জসিম বলেন, অনেকক্ষণ ধরে মহাখালী মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। যাবো শ্যামলী। লেগুনাগুলো গুলশান-১ নম্বর থেকেই যাত্রী নিয়ে ভরে আসছে। কি করবো। তাই হাঁটা দিয়েছি। জাহাঙ্গীর গেটের দিকে ভিড়টা কম। দেখি ওখান থেকে উঠতে পারি কিনা।

চাহিদার তুলনায় যানবাহন কম থাকা ও ট্রাফিক জ্যামের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে জনগণকে।

উত্তরার বাসিন্দা নজরুল ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার অফিস মহাখালী ডিওএইচএস-এ। আর বাসা উত্তরা। প্রতিদিন অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার পথের ভোগান্তি বলে শেষ করা যাবে না। মূলত জনগণের চাহিদার তুলনায় যানবাহন কম থাকায়ই ভোগান্তি যাত্রীদের। তার ওপর জ্যাম। ফলে যে গাড়িগুলো রাস্তায় আছে তাও সঠিক সময়ে ফিরে আসতে পারছে না। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উন্নয়ন না হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
ইউএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।