ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘নির্যাতন সত্ত্বেও আপোস করেননি বাংলার বুলবুল’

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
‘নির্যাতন সত্ত্বেও আপোস করেননি বাংলার বুলবুল’

ময়মনসিংহ: ইতিহাসের কলঙ্কময় অধ্যায় জেল হত্যা দিবস। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী এ চার নেতাকে নির্মমভাবে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর হত্যা করা হয়।

 

জাতির ইতিহাসের অন্যতম বেদনাবিধূর এ দিনে জাতীয় চার নেতার অন্যতম, দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্বজনদের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজো তাড়িয়ে বেড়ায়। বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে দীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সহকর্মীদেরও।

বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) দুপুরে মৃত্যুঞ্জয়ী এ নেতাকে নিয়ে বাংলানিউজের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন তার দুই ছাত্র এবং রাজনৈতিক জীবনের দুই সহকর্মী ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান এবং ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।

তারা বলেন, পথভ্রষ্টরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খুনি মোশতাক শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলার চেষ্টা করেন। তাকে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর কারাগারের বন্ধ চার দেয়ালে তার ওপর অসহনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিলো।

কিন্তু অসহনীয় নির্যাতন সত্ত্বেও বাংলার বুলবুল আপোস করেননি। তার আত্মত্যাগ আপোসহীন রাজনীতির দৃষ্টান্ত। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। বাঙালি জাতির মনের হীরক দ্যুতিতে তিনি চিরদিন জ্বলে থাকবেন।

স্মৃতিচারণ করে ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন আমার শিক্ষক। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।

‘স্যারের স্ত্রী নাফিসা ইসলামও আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। জীবদ্দশায় কোনো দিন স্যারের পরামর্শ ছাড়া কোনো কাজ করিনি। ঘাতকচক্রের হাতে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিনি আপোস করেননি।

দেশের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগ আপসহীন রাজনৈতিক আদর্শের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বলেন ধর্মমন্ত্রী।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের প্রিয় ছাত্রদের একজন ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।

প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন।  

দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৫৩ সালে শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহের অন্যতম বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ইতিহাসের ক্লাস নিতেন। তখন এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।

খোকা বলেন, ‘স্যার প্রাঞ্জল ভাষায় ইতিহাসের ক্লাস নিতেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে স্যারের লেকচার শুনতাম। কলেজের যে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন প্রাণভোমরা। খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে আমাদের উৎসাহ দিতেন। ’

‘‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে আমরা তখন স্লোগান দিতাম ‘বাংলার বুলবুল, সৈয়দ নজরুল’। স্মৃতিচারণ করে বলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা।

সৈয়দ নজরুল ছিলেন সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে কখনো আদর্শচ্যুত হননি। জীবন দিয়ে সেই প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি আইন পেশাতেও সৈয়দ নজরুলের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন অ্যাডভোকেট খোকা। এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি সন্ধ্যায় স্যারের চেম্বারে যেতাম। স্যার আইনি বিষয়াদি বুঝিয়ে দিতেন। এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তিনিই উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এমএএএম/আরআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।